প্রতিবন্ধি রশিদের স্বপ্নের রাজমহল!

নাটোর অফিস ॥
প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ পাকা ঘর পেয়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা গ্রামের ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিবন্ধি আব্দুর রশীদ (৫৬)। তিনি একই সাথে পেয়েছেন হুইল চেয়ার,খাদ্য ও গাছের চারা। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের মাধ্যমে ঘর বুঝে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধি আব্দুর রশীদ। এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই ঘর তার কাছে স্বপ্নের রাজমহল। কোনদিন স্বপ্নেও দেখেননি এমন পাকা ঘর নিজের হবে। বাস করবেন স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে। সারাদিন পরিশ্রম শেষে আর ভাঙ্গা ঘরে ফিরতে হবে না। ।
প্রতিবন্ধি আব্দুর রশীদ বলেন, জন্মের পর বেশ তিনি ভালোই ছিলেন। যখন তার বয়স ১০ বছর তখন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। পরিবারের সাত সদস্যসহ থাকতেন অন্যের জমিতে গড়ে তোলা মাটির ঘরে। বর্ষায় ঘরের চালের ফুটো দিয়ে পড়া পানিতে ভিজতে হতো পরিবারের সদস্যদের। রাস্তার পাশে পাকা কলা বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়েই ৭ জনের আহার জুটতো। তার এক ছেলে অসুস্থ । স্বপ্নের এই রাজমহল পেয়ে এখন আর কষ্ট করতে হবে না তাদের। তার স্বপ্নের এই রাজ মহলে রয়েছে একটি রান্না ঘর,সুন্দর বারান্দা ও ঘরের মধ্যে একটি স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কল্যাণে উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা আশ্রয়ন প্রকল্পের টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা ঘর পেয়ে রশদি মহাখুশী হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার পর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদের সাথে কথা বলেন। এসময় প্রতিবন্ধি আব্দুর রশিদের আনন্দমাখা চেহারা দেখে তিনিও খুশী হন। তবে তার জীবনের করুন কাহিনী জেলা প্রশাসক সহ উপস্থিত জনপ্রতিনিধি সহ সকল সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যথিত করে। জেলা প্রশাসকশামীম আহমেদ প্রতিবন্ধি আব্দুর রশীদ ও তার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেনকে তার সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেন।
উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পাওয়া প্রতিমা রাণী দাস,লিলি রাণী দাস, নিয়তি রাণী সরকার, মালেকা বেগম ও আমেনা খাতুন জমি সহ নুতন ঘর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছে। তারা জানান,শেখ মুজিবের মেয়ে হাসিনা সরকার আমাকে এতো সুন্দর ইটের ঘর দেবে। এই বয়সে ইটের ঘরে থাকতে পারব স্বপ্নেও ভাবিনি। সরকারের কল্যাণে নতুন বাড়ি পেয়েছি। আমার নিজের পক্ষে কখনো এমন বাড়ি তৈরি সম্ভব হতো না। সব মিলিয়ে খুব খুশি লাগছে। এই ঘর আমাদের জন্য রাজমহল, আল্লার কাছে দোয়া করি আমি অনেক খুশি ঘর পেয়ে। প্রতিবন্ধি আব্দুর রশিদ,রমেছা বেগম ও আমিনা বিবি বলেন, শেখ মুজিবের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারকে আল্লাহ যেন বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখে। তারা সকলেই যেন আমাদের মত অসহায় মানুষদের পাশে এই ভাবে দাঁড়ায়।
মঙ্গলবার উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের দ্বিতীয় ধাপে ঘর পাওয়া ২১টি পরিবারকে ঘর প্রদান সহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা নারীদের কর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু, করোনা টিকা ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, স্থাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, প্রতিটি পরিবারকে একটি করে পেয়ারা গাছ ও লেবু গাছ প্রদান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা, শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য শিশু পার্ক, পুরুষদের জন্য ড্রাইভিং, আশ্রয়ণে থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান,স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য চিকিৎসালয়সহ প্রতিটি পরিবারের সুস্থ্য স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থেকে ছেলেমেয়েদের নির্বিঘেœ পড়াশোনা করার সকল ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এ সকল কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র মোঃ শাহনেওয়াজ আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলাল শেখ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তার, সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আবু রাসেল,মশিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বর্তমান বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিথিলা জানায়, তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার এই ঘর। ঘরের সাথে জমি। এছাড়াও পানি,বিদ্যুৎসহ সার্বিক এত সকল সুবিধা সে পাবে তা কখনও কল্পনাও করেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে আত্মনির্ভশীল করার একটি সুযোগ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী। কথা হয় কয়েকজন শিশুদের সাথে। তারা জানায় নিজেদের বাড়িতেই পার্ক। এর চেয়ে ভাল লাগা আর কি হতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাকি সময় দোলনা,স্লিপার ও রাইডারেই সময় কেটে যাচ্ছে তাদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন বলেন, শুধু ঘর করে দিয়েই শেষ হয়নি আশ্রিতদের গল্প। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ২১টি পরিবারের প্রতিটি নারীকে এক মাসের ট্রেনিং করানো হচ্ছে ব্লক বাটি,ক্রিষ্ট্রাল,কাঁথা ও সেলাইয়ের ওপর। পুরুষদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিশুদের মানষিক বিকাশ ঘটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশু পার্ক। এছাড়াও খাদ্য সহায়তা,করোনার টিকা ফ্রি রেজিস্ট্রেশন,চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসালয়, দুটি করে গাছ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের প্রতিটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে গুরুদাসপুরে দুই ধাপে জমির সঙ্গে স্থায়ী পাকা ঘরের মালিকানা পেয়েছেন ১৮৫টি পরিবার।
জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, শিশুদের মানষিক বিকাশে জন্য কয়েকটি রাইড প্রদান করা হয়েছে। যারা উপকোরভোগী রয়েছে তাদের জন্য গাছ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছি। আমরা চাচ্ছি যারা এখানে বসবাস করবে উপকারভোগী রয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, এরা স্বাবলম্বী হবে ভালো পরিবেশে থাকবে আমরা সেই ব্যবস্থাটি সু-নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আমরা চাই সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্নের বাস্তবায়ন সেটি এমন ভাবে আমরা করবো, যেন এখানে বাস করেই তারা শহরের মত অনেক সুযোগ সুবিধা পেতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *