বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃতদেহ পড়ে ছিল সড়কের ধারে

নাটোর অফিস ॥
নাটোরে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মনিরুল ইসলাম (৩৫) নামে গ্যাসষ্টিক রোগে আক্রান্ত রোগীর মরদেহ উদ্ধার করা হয় শহরের প্রধান সড়কের ধার থেকে। শনিবার সকালে শহরের কানাইখালী এলাকার বেসরকারী মডেল হাসপাতাল থেকে প্রায় তিন বিকলোমিটার দুরে রেল স্টেশনের একতা মোড় এলাকায় সড়কের ধারে মনিরুলের মরদেহ পড়ে ছিল। নিহত মনিরুল ইসলাম গুরুদাসপুর উপজেলার বৃ-চাপিলা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং বৃ-চাপিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রহরি।
হাসপাতালের পরিচালক মোজাম্মেল জানান, গ্যাস্টিকে আক্রান্ত মনিরুল শুক্রবার বিকেলে মডেল হাসপাতালে আসেন। ডাক্তার আমিরুল ইসলাম লিপনকে দেখানোর পর বাড়ি না গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার সকালে পুনরায় ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার ভোর রাতে মনিরুল হাসপাতাল থেকে বের হতে চাইলে নার্সরা তাকে বাধা দেয়। এসময় মনিরুলের স্ত্রী সুচনা খাতুন তার স্বামী মনিরুলকে বাহিরে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। স্ত্রীর বাধাও তিনি শোনেননি। এরপর মনিরুল রেল স্টেশন এলাকায় পড়ে রয়েছেন এমন খবর আসলে তার স্ত্রী সেখানে ছুটে যান।
এবিষয়ে জানতে ডাক্তার আমিরুল ইসলাম লিপনের সাথে তার মোবাইল ফোনে (০১৭১১৪৮৩৬৯৬) যোগ যোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান,ডাঃ লিপন তার অসুস্থ মাকে নিয়ে দেশের বাড়িতে গেছেন। আজকেই ফিরে আসার কথা রয়েছে।
নিহতের স্ত্রী সূচনা বলেন, শুক্রবার দুপুরে তার স্বামী মনিরুল ইসলাম গ্যাস্ট্রিকের তীব্র যন্ত্রনায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহরের কানাইখালী এলাকার মডেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোরে মনিরুল হাঁটতে বের হতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এ সময় কর্তব্যরত নার্সরাও তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু মনিরুল সবাইকে বলেন,তিনি ভালো আছেন এবং সুস্থ্য আছেন। তার কিছুই হবে না– এমন কথা বলে সবার বাধা উপেক্ষা করে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বের হয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার বেশ কিছু সময় পার হলেও তিনি ফিরে আসেননি। এরপর খবর পেয়ে তিনি শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় একতা মোড়ে পড়ে থাকা স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়,শনিবার ভোর ৬ টার দিকে মনিরুল হাসপাতাল থেকে বের হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে রেল স্টেশন এলাকায় আসেন। নাস্তা সেরে একতা মোড়ে সড়কের সিগারেটে আগুন ধরিয়ে টানছিলেন। হাসপাতালে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিনি হঠাৎ করে কাঁপতে শুরু করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী, আলমগীর হোসেন ও আশরাফুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নাস্তা শেষে সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে তা টানার সময় হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এসময় তার হাতে ক্যানোলা লাগানো ছিল। মৃগী রোগী ভেবে কেউ কেউ তাকে পয়ের জুতা শুকিয়েছেন। এসময় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান,নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া চলছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *