মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার “স্বপ্নের ঘর” !

নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকার ষাটোর্ধ চায়না বেগম প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাচ্ছেন। ভুমি বা গৃহ কোনটিই নেই তার। ঘর বলতে ছিল সরকারী রাস্তার ধারে কলার গাছের পাতা ও পলিথিন দিয়ে তৈরি একটি ঝুপরি ঘর। সেখানেই কোনভাবে জীবন কাটাচ্ছিলেন। সারাদিন ভিক্ষা বৃত্তি করে যা আয় হয় তা দিয়েই আধ পেটা খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছিল তার। এরই মাঝে খবর পান তার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন। শুধু তাকে নয়, অনেককের জন্য তৈরি করা হচ্ছে এমন ঘর। চায়না বেগম বলেন,বিশ্বাস হয়নি তার । কিন্তু ক’দিন আগে পলক মন্ত্রী এলাকায় এসে তার হাত ধরে নিয়ে যান সেই ঘরে। যেখানে তার জন্য যে ঘর বানানো হচ্ছে সেই ঘর দেখিয়ে দেন। ঘর দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন,তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি পাকা ঘরে বাস করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে প্রাণ খুলে দোয়া করেন। ঘর পাওয়ায় একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী রোজিনা খাতুন,বিয়াঘাটের সালেহা বেগম ও নলডাঙ্গা উপজেলার ত্রিমোহনী আসামপাড়া এলাকার বেগম, মনোয়ারা ও কুলসুম বেগম।
প্রতিবন্ধি রোজিনা খাতুন প্রধানমন্ত্রী তাকে ঘর দিচ্ছেন শুনে কেঁদে ফেলেন। বলেন, এমন সুখবর পাব কোনদিন কল্পনাও করিনি। অন্যের সহায়তা নিয়ে জীবন কাটাতে গিয়ে স্বপ্ন দেখাও ভুলে গিয়েছিলাম। পাকা ঘরে বাস করব এই আনন্দে দিন কাটাচ্ছি। কিছুই ছিলনা বিয়াঘাট গ্রামের সালেহা বেগম, ত্রিমোহণী আসাম পাড়ার কুলসুম ও মনোয়ারা বেগম সহ সুবিধাভোগী অনেকের। কুলসুম বেগম বলেন, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সরকারী জায়গায় ছনের ঘর করে কোনভাবে দিনকাটছিল তাদের। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাকা ঘর দিচ্ছেন শুনে খুশী ধরে রাখতে পারছিনা। এখন আর ঝড় বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হবেনা। প্রতিদিন নামজ পড়ে দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন যেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের জন্ম শতবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে নাটোরে প্রথম দফায় ৫৫৮ জন ভুমিহীন ও গৃহহীন পাকা ঘর পাচ্ছে। কেউ গৃহহীন থাকবেনা,প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষনার পর নাটোরে সুবিধাভোগীদের মাঝে পাকা ঘর হস্তান্তরের জন্য নির্মান কাজ চলছে জোড়ে শোরে। এসব ঘর নির্মান কাজ নিয়মিত তদারকি করছেন জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ঘর নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করে কাজের মান যাচাই করেছেন। বৃহস্পতিবার ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নে চলমান গৃহনির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। এছাড়া সম্প্রতি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার নির্বাচনী এলাকা সিংড়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকার গৃহনির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। এদিন প্রতিমন্ত্রী পলক বয়স্ক সুবিধাভোগীদের কয়েকজনকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ ঘর দেখিয়ে দিয়েছেন। এসময় সুবিধাভোগীরা আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। পাকা ঘর পাওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের জন্য দোয়া করেন ।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাকা ঘর প্রদানের প্রস্তুতি চলছে জোড়ে শোরে। ইতিমধ্যে বন্দোবস্তের নথি সমাপ্ত করা সহ উপকারভোগী চুড়ান্ত করা হয়েছে।চুড়ান্ত প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেছেন। কাজের গুনগত মান সঠিক রাখতে জেলা প্রশাসক সহ স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ নিজেরাই স্বশরীরে হাজির থেকে নিয়মিত কাজের তদারকি করছেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও তার নির্বাচনী এলাকায় ঘর নির্মানকাজ পরিদর্শন করেছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বলেন,চলতি জানুয়ারী মাসের মধ্যে এসব ঘর হস্তন্তর করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিজনের জন্য ২টি ঘর,১টি কিচেন ও ১টি বাথরুম তৈরি করা হচ্ছে। অধিকাংশ ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রংয়ের কাজ। প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ১০ জানুয়ারীর মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সব ঘর নির্মানে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি প্রমান বা ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান,১৫ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর উপকারভোগীদের মাঝে পাকা ঘরগুলি হস্তান্তর করা হবে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা অনুযায়ী দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না,সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, যাদের কোন ঘর বা জায়গা নেই সেই সব ভুমি ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর দেয়া হচ্ছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রথম দফায় প্রায় ৭০ হাজার ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী পাকা ঘর উপহার দিবেন। পর্যায়ক্রমে ৯ লাখ ভুমিহী ও গৃহহীনদের পাকা ঘর দেয়া হবে। দেশে কেউ গৃহহীন থাকবেননা। এই সব ঘর নির্মানে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয় এবং প্রকৃত গৃহহীনরা পায় তা দেখভাল করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি তিনিও তার নির্বাচনী এলাকায় অতিরিক্ত ৫০টি ঘর বানিয়ে দিবেন অসহায় ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে। প্রতিমন্ত্রী বৃত্তহীনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *