
গত ৯৯ দিনে নাটোর জেলার ৭টি উপজেলা থেকে ২ হাজার ৯১৮টি নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনার ২ হাজার ১৫৫টির ফলাফল নেগেটিভ এবং ৮১টির ফলাফল পজিটিভ আসে। এখন পর্যন্ত ৫৮৮টি ফলাফল প্রক্রিয়াধীন আছে এবং ৯৪টি নমুনা নষ্ট হয়েছে।

জেলা বিবেচনায় শততম দিন না হলেও অর্ধশত দিন হিসেবে নাটোরে করোনার বেশ কিছু তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়।
দেশের রেডজোন ঘোষিত জেলার এলাকাসমূহ এমনকি সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত জেলাগুলোর তুলনায় অবস্থা এখনও ভালো নাটোরে। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পাশাপাশি এলাকার, সেই বিবেচনায় নাটোর জেলায় আক্রান্তরা ঠিক সেভাবে পারস্পরিকভাবে ‘ঘনবসতিপূর্ণ’ নন অর্থ্যাৎ একই এলাকায় পাশাপাশি একাধিক আক্রান্ত নেই। এ কারণে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন নাটোরে করোনার ‘বিচ্ছিন্ন’ সংক্রমণ ঘটছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো নাটোরে করোনা মোকাবিলার জন্য উন্নততর কোনো পদক্ষেপ আসছে কি-না সরকারের পক্ষ থেকে।
ডা. মিজানুর রহমান এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, “নিয়মিত কনফারেন্সে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক আমাদের জানিয়েছেন দেশের প্রতিটি জেলায় পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হতে পারে। আমরা র্যাপিড টেস্টিং কিটের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করতে চাই। দেশে বিদ্যমান ল্যাব সুবিধার আলোকে যে পরিমাণ নমুনা প্রতিদিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা আরো বাড়াতে হবে। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষায় জনপ্রতি ব্যয় হয় ৫ হাজার টাকা। এজন্য আমাদের র্যাপিড টেস্টিং কিটেই পরীক্ষা বাড়াতে হবে। তবে এই কিটগুলো হবে খুব উন্নতমানের।”

শুধু তাই নয়, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে করোনা নমুনা সংগ্রহের লোকবলেরও যথেষ্ট সংকট রয়েছে। সমগ্র নাটোরে নমুনা সংগ্রহ করে মাত্র ১২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে তারা ক্লান্তিহীনভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন।
কোন পথে গন্তব্য?
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরুত্ব মেনে চলার জন্য বারবার বলা হলেও ভ্রুক্ষেপ নেই নাটোরবাসীর মধ্যে। দেশের ছুটির শুরুতেও নাটোরে লকডাউন কার্যকর হয়নি। কিছুদিন শহরে লোকদেখানো লকডাউন হলেও উপজেলা পর্যায়ে ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে লকডাউনের নামে মশকারা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতেও নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে প্রশাসন ও পুলিশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালামের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যখন সংক্রমণ ঘটবে বা একজন সংক্রমিত ব্যক্তি করোনা পরীক্ষা না করে যখন অধিক মানুষের মধ্যে বিচরণ করবেন, তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিনতর হয়ে উঠবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এখনো পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাবে নাটোরে। করোনার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। একটি মহামারী প্রতিরোধকাল মানুষের জন্য স্বস্তির হবে না, এটা মেনে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্ততি নিতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, “আমরা মানুষদের সচেতন করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মানুষ সচেতন হলেই নিজেরা বেঁচে যাবে।”




