নাটোর অফিস।।
নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত দুই দিনে ৮৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৮০ জনই পাশ্ববর্তী ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) কর্মী বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ অতিরিক্ত রোগী ভর্তির কারণে রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে বারান্দায় ও মেঝেতে।
আজ রোববার (১ জুন) সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে লালপুর ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। হাসপাতালের পুরষ ও মহিলা ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় চাদর ও পাটি বিছিয়ে ৫০-৬০ রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমে রোগী ও স্বজনদের হাঁসফাঁস অবস্থা।
লালপুর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে এসেছেন। আশরাফুলের ভাষ্য, ঈশ্বরদী ইপিজেডের এ্যাবা গ্ররুপে চাকুরি করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডের কারখানায় সরবরাহ করা পানি পান করেন তিনি। তার পর থেকে শুরু হয় পেটব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা। পরে উপায় না পেয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
একই কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের পুরুষ ওয়াডের বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া আকতারুজ্জামান। তার ভাষ্য, তার মতো ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত ৭০-৮০ জন শ্রমিক এই হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রাস্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবাই বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডের কারখানা থেকে সরবারহ করা পানি বা খাবার খাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা অনুভব করতে থাকেন। রাতে শুরু হয় বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা। পরদিন সকালে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসাপাতালে এত পরিমানে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে যে হাসপাতালের মেঝেতে পর্যন্ত জায়গা নেই।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পাতবার রাত থেকে হাসাপাতালে ডায়রিয়ার রোগী আসতে শুরু করেছে। গত শনিবার ৩১মে ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৪ জন। রোবিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত ২২ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে ৮৯ জন এর মধ্যে ৮০ জনই ইপিজেডের কর্র্মী। প্রতি ঘন্টাতেই এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ১৩৮ রোগী ভর্তি ছিলেন। অতিরিক্ত ভর্তি ৮৮ জন রোগী ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা করে সেবা নিচ্ছেন। এসব রোগীর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ আজম সরকার বলেন, হাসপাতালে বেশিরভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ইপিজেডের কর্মী। তারা সবাই খাবার ও পানি পান করার পর থেকে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে খাবার ও পানির মধ্যে জীবনার ছিলো যা খাবার পর থেকে ছরিয়ে পড়েছে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মুনজুর রহমান সমকালকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শয্যার তুলনায় এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন গুন বেশি ১৩৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া রোগ নিয়ে ৮৯ জন রোগী ভর্তি আছেন এর মধ্যে ৮০ জনই পাশের ঈশ্বরদী উপজেলার ইপিজেড কর্র্মী। তারা সবাই খাবার ও পানি পান করার পর থেকে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অতিরিক্ত রোগী ভর্তির কারণে রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তার পরেও আমরা সাধ্য মত কাঙ্খিত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ’