
নাটোরে মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ভিন্ন মত জানিয়েছেন চালক ও গাড়ির মালিক। বিএনপির দাবি’ আওয়াামী লীগ কমীদের লাগানো আগুনে মাইক্রেবাস ভস্মিভুত হয়েছে। এসময় সরকার দলীয় সমর্থকদের হামলায় চালক সহ ছাত্রদলে ১২ নেতা কমী আহত হয়। তারা মাইক্রোবাসের চালক ছাত্র ও নেতা কর্মীদের কুপিয়ে আহত করে। রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে নাটোর বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বিএনপির অভিযোগকে মিত্যাচার বলে দাবি করেছে নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ।
নাটোরে লালপুরের ধুপইল গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলীর ছেলে আহত মাইক্রেবাস চালক শাহিন আলম জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বগুড়া যাওয়ার যাওয়ার জন্য তার মাইক্রেবাস ভাড়া করে। রোববার সকাল ৯ টার দিকে ১১ জন যাত্রি নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্রে রওনা হই। পথে নাটোর সদরের ডালসড়ক এলাকায় পৌঁছালে তার মাইক্রোবাসের পথরোধ করা হয়। এসময় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ২০ থেকে ২৫ জন যুবক তার গাড়িতে বিএনপি কর্মী আছে বলে হামলা চালায়। তারা গাড়িতে থাকা যাত্রিদের টেনে হেঁচরে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধঢ়ক মারপিট করে। এসময় কয়েকজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তারা প্রানবাঁচাতে দিবিদিক ছুটে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা আমার শরীরের বেশ কিছু জায়গায় ছুরিকাঘাত অঅমি গুরুতর আহত হই। এসময় আমি প্রানে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালিয়ে হাতিয়নদহ এলাকায় যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। তবে মাইক্রেবাসের মালিক রকিবুল ইসলাম করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের কর্মীরা মাইক্রোবাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিএনপির রোড মার্চে যোগ দিতে যাওয়ার সন্দেহে মাইক্রোবাসে আগুন দেয় তারা। কিন্তু বিয়ের কনে দেখতে যাওয়ার জন্য ভাড়া নিয়ে নওগাঁ যাচ্ছিল মাইক্রোবাসটি। চালক মোবাইল ফোনে মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানালে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

বাগাতিপাড়ার উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সরকারী দলের কর্মী সমর্থকরা পথে পথে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশীর নামে সাধারন মানুষের লাঞ্ছিত ও হয়রানি করে। তারা বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বহনকারী মাইক্রেবাসে হামলা চালায় এবং তাদের ছুরিকাঘাত করে।
আকরাম হোসেন নামে স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ সদস্য জানান, ঘটনার পর পরই ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজনকে একটি মাইক্রোবাসের কাছে দাঁড়িতে থাকতে দেখি। কিছুদুর যাওয়ার পরপরই মাইক্রেবাসটিতে আগুন ধরে যেতে দেখি। পরে ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশ এসে আগুন নেভায়।

পুলিশ ও দমকল বাহিনী সুত্রে জানাযায়, একটি মাইক্রোবাস নাটোর থেকে বগুড়া অভিমুখে যাচ্ছিলো। নাটোর বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত মাইক্রোবাসটির পথ রোধ করে দাঁড়ায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তে মাইক্রোবাসটি আগুনে পুড়ে ভস্মিভুত হয়। বাধা দেয়ায় চালক শাহিনকে পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্ত। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাইক্রেবাসের যাত্রিরা নেমে যাওয়ায় প্রানে রক্ষা পেয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, বগুড়া থেকে বিএনপির রোড মার্চে যোগ দিতে যাওয়ার সন্দেহে মাইক্রোবাসে আগুন দেয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত।
নাটোর ফায়ার স্টেশনের লিডার রুহুল আযম বলেন, খবর পেয়ে সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইক্রোবাসে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তারা আগুন নিভিয়ে ফেললেও মাইক্রোবাসের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার দলীয় সমর্থকরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রচার সম্পাদক জুয়েল রানাকে দত্তপাড়া এলাকায় কুপিয়ে জখম করেছে। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার সৈয়দের মোড় ,তেবাড়িয়া বাইপাস ও দিঘাপতিয়া এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী করে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা একটি প্রাইভেট কার ও দু’টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাংচুর করে। রোববার সকাল থেকেই সরকার দলীয় সমর্থকরা জেলার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে যাত্রিবাহি গাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং বিএনপি সন্দেহে অনেককে মারপিট করে।
এবিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কনে দেখতে যাওয়ার সময় কতিপয় দুর্বৃত্ব কর্তৃক মাইক্রেবাসটি আক্রান্ত হয়। মাইক্রেবাসের মালিকের দেয়া এমন বক্তব্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত বা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা ঢাকতে এমন মিথ্যাচার করে আওয়ামীলীগের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। আওয়ামীলীগের কোন নেতা-কর্মী ওই এলাকায় ছিলেননা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলী বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



