নাটোরে সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা

নাটোর॥ নাটোরে আসন্ন শীত মৌসুমে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে শীতের শুরুতেই বাজারে বিভিন্ন নতুন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কম। দাম কম হওয়ায় সাধারন ক্রেতারাও খুশী। তবে দাম নিয়ে চাষীরা হতাশা প্রকাশ করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, নাটোর জেলায় চলতি মৌসুমে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অক্টোবর মাস থেকে সবজি চাষ শুরু হলেও অনেক চাষী আগাম সবজি চাষ করেছে। মার্চ মাস নাগাদ সবজি চাষের শেষ সময় নির্ধারিত হলেও নভেম্বর মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। গোল আলু সহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি নাটোরের স্থানীয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
নাটোর নীচাবাজারের বিভিন্ন সবজি আড়ৎ সুত্রে দেখা যায়, বাজারে শীতের সবজি উঠেছে। ফুল কপি, বাধা কপি, ধনিয়া পাতা, লাউ, পেঁপে, মুলাসহ বেশ কিছু সবজির সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে ক’দিন ধরে আসতে শুরু করেছে নতুন গোল লাল ও সাদা আলু। শুরুতে এসব লাল গোল আলু প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন কমে ৭০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন ওঠা সাদা অর্থাৎ হলেন্ডার জাতীয় আলুর দাম আরো কম।
বাজারে ওঠা নতুন সবজির মধ্যে ফুল কপি প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৫ টাকা, পাতা কপি প্রতি পিস ১১ থেকে ১৫ টাকা, বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ প্রতিপিস ১৬ থেকে ২২ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ১০ টাকা, সিম ২৩ থেকে ৪০ টাকা কেজি, টমেটো ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ধনে পাতা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, পালং শাক প্রতি কেজি ১৩ থেকে ১৬ টাকা, বরবটি ২২ থেকে ২৭ টাকা, পেঁপে ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা প্রতিকেজি, গাজর প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা , করলা প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকা প্রতিকেজি ৮০ টাকায় এবং এক আঁটি (৮ থেকে ৯টি) নতুন পিয়াজ ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন আলু বাজারে উঠলেও পুরাতন প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৩ টাকা এবং পিয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার কৃষক সায়েদ উদ্দিন বলেন, তিনি অন্তত ২০ বিঘা জমিতে পাতা কপি চাষ করেছেন। বেশ ভালই হয়েছে। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা ছিল। কিন্ত বাজারে সবজির সরবরাহ বেশী হওয়ায় দাম পড়ে গেছে। এতে লাভের পরিমান কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপর এক কৃষক আফেল উদ্দিন জানান, তিনি পাতা কপি, গাজর, ফুল কপি, পালং ও লাল শাক চাষ করেছেন। দাম পাওয়ার আশা করছেন। তবে বাজারে এখনই ব্যাপকহারে সবজি সরবরাহ হচ্ছে। এতে করে দাম না পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, নাটোর হচ্ছে ধান উৎপাদনের দিক থেকে অগ্রগামী এলাকা। তেমনি সবজি চাষের উপযোগী এলাকা। বিশেষ করে এখানে শীতকালীন সবজি ভাল হয়। এই জেলায় শীতকালীন সবজি আবাদের সময় শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। কিন্তু কৃষক আগে থেকেই শীতকালীন সবজি আবাদ শুরু করেছে। স্থানীয় বাজার ছাড়া ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এবার ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগাম চাষ শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে বিপুল পরিমানে শীতকালীন সবজি বাজারে ওঠা শুরু করেছে। সবজি চাষে খরচ যেমন কম, তেমনি লাভও হয় বেশী। আবহাওয়া অনুকলে থাকায় পোকা পাকড়ের আক্রমনও তেমন নেই। এছাড়া কৃষিবান্ধব সরকারের নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে নাটোরের চাষীরা নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তারা রোগ বালাই ও পোকা মাকড় দমনে হাত বাছাই ও লেয়ারের মাধ্যমে করে। ফলে তারা সহজেই ও আগাম নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *