‘ভাই হত্যার বিচার চাইতে বহুবার মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছি’

এডভোকেট আবুল কালাম আজাদঃ আজ ০৬ জুন। শহীদ জননেতা মমতাজ উদ্দীনের শাহাদাৎ বার্ষিকী। শহীদ মমতাজ উদ্দীনের মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় (ঢাকা, রাজশাহী,নাটোর) বিভিন্ন ক্ষেত্রে(সিআইডি, পুলিশ, জুডিশিয়াল) বহু ঘাত প্রতিঘাত, অত্যাচার এমন কি জীবনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে বহুবার। তেমন একটা ঘটনা।

একদিন নাটোর কোর্ট শেষ করে বাড়ি ফিরবো এমন সময় নাটোরের একজন পুলিশ অফিসার আমার কাছে এসে জানতে চাইলেন, “আগামীকাল আপনাদের মমতাজ উদ্দীন হত্যা মামলার নারাজির শুনানি আছে?” আমি বললাম হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, “আপনি আগামীকাল কোর্টে আসবেন না। একদিনের জন্য পোষ্টিং হয়ে ঢাকা থেকে নতুন একজন বিচারক এসেছেন, উনি আপনার মমলার নারাজি নামঞ্জুর করে চলে যাবেন।আপনার আগামীকাল কোর্টে আসা জীবনের ঝুঁকি হবে, প্রতি রাস্তায় আপনাকে মার যখম এমন কি খুন করা হতে পারে। আপনার একজন হিতাকাঙ্খী হিসাবে আপনাকে এই গোপন তথ্যটুকু বললাম।”

এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নাটোর থেকে বাড়ি চলে আসলাম। কিভাবে কোর্টে যাবো এই ভাবে খুব দুঃশ্চিন্তায় হচ্ছিলো। রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার সিনিয়র এ্যাডভোকেট শ্রদ্ধেয় আওয়ামীলীগ নেতা ইউসুফ ভাই ফোন করে বললো যে কালকে কোর্টে আসার আগে যে ভাবে ই হোক, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এই মামালার ম্যাজিস্ট্রেট মজিবুর রহমান‌ (মমতাজ ভায়ের বন্ধু মানুষ), তার বাসায় যাবে তার সাথে দেখা করবে। যে ভাবেই হোক তার সাথে কথা বলবে। আমি পরের দিন ভোর পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা দিকে শুধু তিতাসের আম্মাকে জানিয়ে (পল্লব,তুষার অনেক ছোট তাদেরও কিছু না বলে) রাস্তায় আমায় কেউ চিনতে না পারে সেই জন্য আমার মটরসাইকেল পরিবর্তন করে, হেলমেট পড়ে, রেইনকোর্ট পড়ে, নাটোরে মুজিবুর রহমানের বাসায় পৌছলাম, যাকে বিএনপি জামায়াত সরকার মমতাজ উদ্দিনের মামলার শেষ করে দেবার জন্য এনেছিলো।

যাই হোক, উনি আমার সব কথা শুনে বললেন আমি সার্কিট হাউজে না থেকে বোনের বাসায় থাকছি। মমতাজ ভাইয়ের মামলার বিষয়ে শুনে তার বোন বললেন মমতাজ ভাই অনেক ভালো মানুষ। তিনি বহুবার আমাদের বাসায় এসেছেন খেয়েছেন, থেকেছেন।

এই কথা শুনে তিনি আমাকে বললেন, আপনি কোর্টে যাবেন এবং নারাজি শুনানি করবেন না এই মর্মে একটা দরখাস্ত দিবেন। আপনার প্রতিপক্ষ হয়তো এইটা শুনতে চাইবে না, চিল্লাচিল্লি করবে কিন্তু এর মধ্যেই আমি আপনার পক্ষে একটা আদেশ দিয়ে দিবো। তারপর আমার প্রমোশন হোক আর ডিমোশন হোক আমি এখান থেকে চলে যাবো।”

আমার মনে পড়ে সেদিন কোর্টে সিংড়ার শাহাজাহান ভাইয়ের ছোট ভাই এ্যাডভোকেট শামসুর হক আমাদের পক্ষে প্রচন্ড ভূমিকা রাখেছিলো। আমাদের হানিফ ভাই, শাহজাহান ভাই, এ্যাডভোকেট আনিসুর, মিজান সহ বিশ, পঁচিশ জন উকিল শুনানীতে অংশগ্রহণ করলাম। চারিদিকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো। বিএনপি জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হলাম। তারা খুব চিল্লাচিল্লি করছিলো। পরিস্থিতি এমন যে আমরা কথা বললেই গ্রেফতার করবে।

তো, বিচারক কোন কথা বললেন না। তিনি মাথা নিচু করে আদেশ লিখে গেলেন। তিনি কোর্ট থেকে নামার পূর্বে আমার দরখাস্তকে গ্রহণ করলেন এবং মামলাকে এই অবস্থায় রেখে গাড়িতে করে জয়পুরহাটে চলে গেলেন।

আমরা সেদিন বিএনপি, জামাতের অনেক তোপের মুখে কিন্তু কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আমরা সকল আইনজীবীরা নাটোর কোর্ট থেকে বের হয়ে আসলাম। শহীদ মমতাজ উদ্দীনের এই মমলা পরিচালিত করতে গিয়ে বহু ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বহুবার জীবন, মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। আজকের এই দিনে এই কথা টুকু মনে পড়ে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখকঃ
সিনিয়র সহ-সভাপতি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ,
সাবেক সংসদ সদস্য, নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া); ও ছোট ভাই, শহীদ মমতাজ উদ্দীন আহমেদ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *