দায়িত্ব নিলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবেন রাহেলা

 

 


নাটোর অফিস॥
বয়স ৭৫ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। কানে খুব ভালো শুনতে পাননা। চোখেও ভালো দেখতে পাননা। পথ চলতে লাঠির সাহায্য নিতে হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ,হাট বাজার বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাত পেতে ভিক্ষা করেন। কথা হচ্ছিল নাটোরের বাগাতিপাড়ার বিলগোপাল হাটী গ্রামের বৃদ্ধা রাহেলার সাথে।
রাহেলা জানান, কবে জন্ম হয়েছে সঠিক করে বলতে পারবনা। তবে বাবা-মায়ের কথায় যতটুকু মনে পড়ে ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ এর মধ্যে হবে তার জন্ম। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই স্বামী জলিল উদ্দিন মারা গেছেন। তারিখটা তার জানা নেই তবে সেইদিন ছিল রবিবার । স্বামী মারা যাওয়ার সময় তিনি চার সন্তানের জননী। দুই ছেলে জনাফ ও দুলাল এবং দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারের কারো সহযোগিতা পাননি। বরং পেয়েছেন তিরস্কার আর ধিক্কার। তাই স্বামী মারা যাওয়ার ৩দিন পরেই নেমে পড়েন এই ভিক্ষাবৃত্তিতে। ভিক্ষা করে চার সন্তানের মুখে খাবার যুগিয়েছেন। ছেলে মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেরা তাকে দেখেনা। দুই মেয়ের কারোরই সংসার নেই বড় মেয়ের বাচ্চা হতে গিয়ে সমস্যার জন্য নাড়ী(জরায়ু) কেটে ফেলতে হয়। তাই তার সংসার টিকেনি। আর ছোট মেয়েটা পাগলী। মেয়ে দুটোই মায়ের মত ভিক্ষা করে। ছেলেরা আলাদা থাকে মায়ের খবর রাখেনা। তবে টাকার দরকার হলে বউকে দিয়ে জোর করে নিয়ে যায়।
সরকার থেকে কোনো সুবিধা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রাহেলা জানান, তিনি বললেন বয়স্ক ভাতার ৩’শ টাকা পান। আগে পেতেন ২’শ টাকা করে। এই দুই-তিন শত টাকায় সংসার চলেনা। ছেলেরা কি করেন জানতে চাইলে বৃদ্ধা বলেন, ছোট ছেলে ভ্যান চালক আর বড় ছেলে দিন মজুরী করে।
এবার জানতে চাইলাম ছেলেরা যদি আপনার সব দ্বায়িত্ব নেই তাহলে আপনি বা আপনার মেয়েরা কি ভিক্ষা ছেড়ে তাদের সাথে থাকবেন? এমন কথা শুনে হাজারো কষ্টের মাঝেও এক চিলতে হাসি দিয়ে বললেন, ছেলেরা আমারে নিবেনা। ছেলেরা তাকে বলেছে, মা তুই যেভাবে খাচ্ছিস সেভাবেই খা। আমাদেরকে কিছু বলবিনা। তবে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, আপনারা যদি সব ঠিক করে দিতে পারেন তাহলে ভিক্ষা বৃত্তি ছেড়ে দিব। এই ভিক্ষাবৃত্তি করতে ভাল লাগেনা। শরীরটাও এখন চলতে চায়না। তবুও শেষ কথা বললেন, ছেলেরা নিবেনা । আমার টাকা নিয়ে ওরা বড়লোক হয়েছে। দালান বাড়ি দিয়েছে। তারা আমারে নিবেনা। দেখেন আপনারা। এই কথাগুলো আপন মনে বিরবির করে বলতে বলতে চলতে শুরু করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *