সিংড়ায় ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে -পলক

নাটোর অফিস ॥
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দক্ষ নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল আর্কিটেক সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শে প্রযুক্তির উদ্ভাবনী সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এখন আর বাংলাদেশ শ্রম ঘন অর্থনীতির দেশ নয়, তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ। কায়িক পরিশ্রমের জন্যে কষ্টকর প্রবাস জীবন নয়, তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এদেশের তরুণ-তরুণীরা ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন। তথ্য প্রযুক্তি খাতে ২০ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে ১.৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে বাংলাদেশ।
রোববার ভারতীয় হাই-কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীকে নিয়ে নাটোরের সিংড়ায় ‘আইটি/হাই-টেক পার্ক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক এসব কথা বলেন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাই-কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী দুই দেশের অত্যন্ত উন্নত সম্পর্ক আরো দৃঢ়করণ এবং আইসিটি সেক্টরসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারীত্ব বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগসহ আইসিটি খাতে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ-ভারত। অদূর ভবিষ্যতে ভারত বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন পরবর্ত্তী সিংড়া উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আরো বলেন, প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিংড়ায় হাই-টেক পার্ক স্থাপন সম্পন্ন হলে এই এলাকার তরুণ-তরুণীরা ঘরে বসে ইউরোপ-আমেরিকার মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ডলার উপার্জন করতে পারবে। এই হাই-টেক পার্কে থাকছে স্টিল স্ট্রাকচারের সাত তলা মাল্টিটেনেন্ট ভবন, তিন তলা ডরমেটরি ভবন, একটি সিনেপ্লেক্স ভবন, খেলার মাঠসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এসব স্থাপনার মাধ্যমে সিংড়ায় একটি চমৎকার ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে। ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বৃদ্ধি করবে এই ‘হাই-টেক পার্ক’।

পলক আরো বলেন, ২০৪১ সালের প্রযুক্তি নির্ভর মেধাবী উন্নত দেশ গড়তে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তারুণ্যের অফুরান শক্তিতে প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি এবং মাইক্রো প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে দেশের প্রযুক্তি খাত। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মেধাভিত্তিক শীর্ষ প্রযুক্তির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আর এই লক্ষ্য পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সততা, সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। পলক বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি এবং আবহাওয়া একই। আমরা দুই দেশের মানুষের চলমান বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের এক হাজার ৯৮৪ সেনা সদস্যের জীবন উৎসর্গসহ ভারতের অসামান্য অবদানকে এদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে।
পলক বলেন, নাটোররে আইটি হাইটেক র্পাকের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কয়েক লাখ তরুণের র্কমসংস্থান তৈরি হবে এই হাইটকে পাকে। সিংড়ার মাটিতে বসে ফ্রিল্যান্সাররা হাজার হাজার ডলার আয় করছে। তাতে যেমন পরিবার সচ্ছল হচ্ছে অন্যদিকে দেশও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই নতুনরাই দেশের মূল শক্তি সেটা বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন। বাংলাদেশে ভারতের আর্থিক সহায়তায় ১২টি হাইটকে র্পাক নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের ৪ কোটি এবং ভারতের ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ভারত বাংলাদেশকে স্বল্পসুদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধেরর সুযোগ দিয়ে এই ঋণ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে বর্তমানে সারা দেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক,সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক,আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯টি পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। যেখানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক এ, কে, এ, এম, ফজলুল হক জানান, প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোল মৌজায় ৯.২৮ একর জমিতে এই হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে এখানে প্রায় ৩০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
অন্ষ্ঠুানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ বিকর্ণ কুমার ঘোষ, নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ , পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিাংল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক জুবায়ের,সহকারি পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) জামিল আকতার, সিংড়া থানার ওসি নূর-এ-আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।
সকালে ভারতীয় হাই-কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছিলে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে প্রতিমন্ত্রী পলক ভারতীয় হাই কমিশনারকে সাথে নিয়ে নির্মাণাধীন হাই-টেক পার্ক প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপন করেন। পরে সিংড়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রযুক্তিতে সফল ১৯জন উদ্যোক্তার হাতে ল্যাপটপ তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এসময় ভারতীয় হাই-কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীকে নৌকা উপহার দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *