বর্ষা মৌসুমেও ফুলে ফুলে নান্দনিক করে তুলেছে উত্তরা গণভবনের পরিবেশ

নবীউর রহমান পিপলু,নাটোর অফিস ॥
ঐতিহাসিক স্থাপত্য নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে দেশী-বিদেশী প্রায় ৪০ প্রজাতির ফুল। এই রাজবাড়িটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলের বাসভবন হিসেবে ঘোষিত হলেও দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে উন্মক্ত। উত্তরা গণভবন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই রাজবাড়ির অভ্যন্তরে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছগাছালি। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুর দেয়া গণভবন নামকরনের পঞ্চাশ বছর পুর্তি উৎসব পালন করা হয়। এউপলক্ষ্যে দর্শনার্থীসহ বিদেশী অতিথিদের জন্য রাজবাড়িটিকে নানা প্রজাতির ফুল ও গাছগাছালি দিয়ে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হয়। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া উত্তরা গণভবনের নামকরনের পঞ্চাশ বছর পুর্তি উপলক্ষে নতুন করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। রোপণ করা হয়েছে বিরল ও নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। নির্মল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গণভবন চত্বরে রোপণ করা হয়েছে নানা প্রজাতির ঔষধী গাছ। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বৈচিত্রময় এবং নান্দনিক করে তুলেছে উত্তরা গণভবনের ভিতরের পরিবেশকে।

বর্ষা মৌসুম সত্বেও গণভবনের ভিতরে এখন শোভা পাচ্ছে বিরল ও নাম না জানা দেশী বিদেশী নানা প্রজাতির ফুল। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপণ করা বিরল প্রজাতির হৈমন্তি সহ বর্ষায় ফুটে থাকা নান প্রজাতির ফুল এখন সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
গণভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর থেকেই নজর কাড়ে গাছের ডালে ডালে সুশোভিত ফুল আর ফুল। কাছাকাছি হতেই ফুলের সৌরভ ও ঘ্রান স্পর্শ করে নাক। রাজবাড়ির মুল ভবনের পাশে গেলেই নাগলিঙ্গম ফুলের তীব্র ঘ্রান নাকে লাগে। এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। ফুলটির পরাগচক্র দেখতে সাপের ফণার মতো। নয়নকাড়া ফুল আর বিচিত্র গোলাকার ফলের জন্য নাগলিঙ্গম সবার কাছে বাড়তি আকর্ষণের। নাটোরের উত্তরা গণভবনের রাজপ্রাসাদের দক্ষিণে কয়েক গজ এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই নাগলিঙ্গমের।এ ফুল দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এছাড়া শ্রীলংকার জাতীয় ফুল নাগেশ্বরচাপা গণভবনের পরিবেশকে করেছে মনোমুগ্ধকর।

ইটালিয়ান গার্ডেনে রয়েছে মার্বেল পাথরের চারটি মুর্তি ও একটি ফোয়ারা। ওই ফোয়ার দু’পাশে প্রায় দেড়শ বছরের পুরাতন হোয়াট এলামন্ড ফুল শোভা পাচ্ছে। ওই ফোয়ারার প্রবেশ পথে শোভা পাচ্ছে হংসলতা ফুল। ইটালিয়ান গার্ডেনে রয়েছে শোভাবর্ধনকারী জাপান থেকে আনা লাল রংয়ের হাইডেন্ট।
গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সাদা,বেগুনী ও গোলাপী রংয়ের চেরি ফুল। গ্রান্ড মাদার হাউসসহ রাজ প্রাসাদ চত্বরে শোভাভর্ধনকরছে গ্যালথোনিয়া,এগপ্লান্ট,ম্যাগনেসিয়া,রাধা চুড়া,পারিজাত,রঙ্গন, সাদা মসুন্ডা,ডানথাস,নয়নতারা,স্থলপদ্ম,ইয়োলো এলামন্ড,গন্ধরাজ,কাঁঠালচাপা সহ নানা প্রজাতির ফুল। গণভবনের অভ্যন্তরের চারিদিকে জিনিয়া ও রঙ্গন ফুলের রং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বৈচিত্রময় এবং নান্দনিক করে তুলেছে উত্তরা গণভবনের ভিতরের পরিবেশকে।

গণভবনের কর্মরত গণপুর্ত বিভাগের মোবারক ও আনোয়ার হোসেন জানান, তারা গণভবনে মালির কাজ করেন। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে দিনভর বিভিন্ন ফুলের গাছ রোপণ সহ পরিচর্যার কাজ করেন। গণভবনের মধ্যে বিদেশী জাতের ফুলের গাছই বেশী। শীত মৌসুমে চারিদিকে ফুলে ফুলে ভরে যায়। তবে বর্ষা মৌসুমেও অনেক গাছের ফুল ফোটে। এবার হৈমন্তি গাছেও ফুল ফুটে রয়েছে। নাগলিঙ্গম, নাগেশ্বর, হংসলতা,এগপ্লান্ট,ম্যাগনেসিয়া,রাধা চুড়া,পারিজাত,রঙ্গন, সাদা মসুন্ডা,ডানথাস,নয়নতারা,স্থলপদ্ম বর্ষা মৌসুমে ফোটে। একারনে দর্শনার্থীরা গণভবন পরিদর্শনে এস আনন্দ পায়।

 

উত্তরা গণভবনের হিসাব সহায়ক নুর মোহাম্মদ বলেন, , দিঘাপতিয়া রাজা দয়ারাম রায়ের (১৬৮০-১৭৬০) চতুর্থ বংশধর রাজা প্রমোদ নাথ রায় (১৮৪৭-১৮৮৩; ১৮৬৭ সালের নভেম্বরে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন) খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তার সময়ে বিদেশ থেকে কিছু বিরল প্রজাতির ফুল, ফল আর ঔষধি গুণাগুণের গাছ এনে রোপণ করা হয়। রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল বসন্ত আর গ্রীষ্মের এসব ফুল। উত্তরা গণভবনে দেশী বিদেশী প্রায় ৪০ প্রজাতির ফুল গাছ রয়েছে। এসব ফুল গাছের অনেকগুলোই বিরল প্রজাতির। এরমধ্যে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রোপণ করা হৈমন্তি।

 

উত্তরা গণভবনের সহকারি ব্যবস্থাপক খায়রুল বাসার বলেন,এবার ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া গণভবনের নামকরনের পঞ্চাশ বছর পুর্তি উপলক্ষে গণভবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলা হয়। এসময় দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ হাজার ফুলের চারা রোপণ করা হয়। এসব রোপণকৃত ফুল গাছে ফুল শোভা পাচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য গণভবন চত্বতে রোপণ করা হয়েছে ভেষজ গাছ। এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে যারা বিনোদনের জন্য গণভবনে আসবেন তারা আনন্দ পাবেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন,উত্তরা গণভবনকে প্রাকৃতিকভাবে স্যেন্দর্য্য করে তুলতে ভেষজ উদ্ভিদ সহ নতুন নতুন ফুলের চারা রোপণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিরল প্রজাতির ফুল ও ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবারে নতুন করে সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মাক্স ব্যবহার বাধ্যতামুলক।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *