জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে সদর হাসপাতাল

কামরুল ইসলাম ,নাটোর ॥
নাটোরের সদর হাসপাতালে চিকিৎসক জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা। ওয়ার্ডের শয্যা সংকটে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বারান্দা ও মেঝেতে থাকায় কাংখিত চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগিরা। বহিঃবিভাগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও দেখা মিলছেনা চিকিৎসকের। প্রয়োজনিয় ওষুধ না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগিরা। অব্যবস্থাপনার ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা নড়বড়ে বলে মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা। চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে বেশি রোগিকে চিকিৎসা দিতে কিছুটা অনিয়ম হলেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, রোগির স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করে। তাই বেলা ১২টার পরে আর কোনো পরিক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। এছাড়া হাসপাতালে কুকুর কামড়ানো ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেয়া হয়। আর সাপে দংশনের ভ্যাকসিন জুরুরি বিভাগে রাখা থাকে। রোগি আসলে চিকিৎসক দেখে সংগে সংগে ব্যবস্থা গ্রহন করে চিকিৎসক।
সদর উপজেলার দস্তানাবাদ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া জানান, সকাল আটটা থেকে ৬ মাসের শিশুকে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বসে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি।
নলডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর থেকে আসা মারিয়া বেগম জানান, প্রাইভেটে চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই ৫টাকা টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছি। তিন ঘন্টা পার হলেও দেখা নাই চিকিৎসকের।
হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে আসা কাদের আলী জানান, চিকিৎসক ভিতরে বসে ওষুদ কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে আলাপ করছেন। আর মাঝে মধ্যে একজন করে রোগি দেখছেন।
গলার ব্যাথায় কাতর সাহানুর বেগম আবাসিক অফিসার চার্জ প্রাপ্ত ডাঃ এম এ মোমিন এর চেম্বারের সামনে দরজায় বসে আছে দুই ঘন্টা। বসে থাকার কারন জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জানান, ডাক্তার মিটিং করছেন।
পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগি পার্বতী রানী জানান, দুইদিন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছি। শয্যা না পাওয়ায় বারান্দার জায়গা হয়েছে। কিন্তু মেঝেতে আছি তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ না দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এখন কি করব?
সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে রোববার সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। সকল সেবা ঠিক মতো দিলেও রাইচ স্যালাইন ও বায়োকিট নামে দুটি ওষুধ বাহির থেকে কিনেছেন।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ বলেন, যে সকল ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। এছাড়া ওষুধের মজুদ আছে। ওয়ার্ডে ১৪ শয্যার বিপরিতে রোগি ভর্তি আছে ২৪ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬জন শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত সাত দিনে ১১৪জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগির চাপ নেই।
বহিঃবিভাগে রোগি দেখিয়ে ফার্মেসীতে ওষুধ নিতে আসা সেলিম বলেন, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক দুই পাতা করে মোট চার ধরনের ওষুধের নাম লিখেছেন। আর ওষুধ পেয়েছি এক পাতা করে। চাইলে বলে আর নেই।
মল্লিক হাঢি এলাকার সাহানা খাতুন বলেন, আমাকে শুধু পাঁচটি করে ওষুধ দিয়েছে। বাকি ওষুধ কোথায় পাবো।
হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও ফার্মেসী বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা বলেন, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগিদের কম করে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদা মতো দেয়া হবে।

হাসপাতাল লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম জয় কুমার বলেন, পুরাতন ব্রেড, কাছি ও ছেনি দিয়ে লাশের কাটা ছেড়া করতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে। নতুন যন্ত্রপাতির জন্য উর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ পাওয়া যায়নি। পেলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসক সুমনা সরকার বলেন, সকাল আটটায় হাসপাতালে এসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে হয়। তার পরে নতুন রোগির সমস্যা দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে করে বহিঃ বিভাগের চেম্বারে বসতে দেরি হয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে সঠিক সময়ে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসাক দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হবে না।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ মোমিন বলেন, জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩’শ রোগিকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যান্তরে এক’শ শয্যার বিপরিতে প্রতিদিন রোগি ভর্তি থাকে দুই’শ জন। বাধ্য হয়ে বারান্দা ও মেঝেতে রাখা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে রোগিদের পরামর্শ দিতে দেরি হয়। ফলে চেম্বারের সামনে ভিড় করে রোগিরা।
হাসপতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিষ্ট দিয়ে চলছে প্যাথলজ্,ি পরিচ্ছন্নতা কর্মি নাই ৩৬জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগি ও বহিঃবিভাগে রোগি দেখছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলে সমস্যা সমাধান হবে। শয্যা সংকটই বেশি। সরকারী ইডিসিএল চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ না করায় রোগির পরামর্শ পত্রের চাহিদা মতো ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। চিকিৎসক আর হাসপাতালে ওষুদের সরবরাহ কম থাকায় এমন অভিযোগ। তারপরেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে দাবি এই কর্মকর্তার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *