চিনা মুরগী আনেছা বেগমের দুঃখ ঘুচিয়েছে

নাটোর অফিস ॥
দুর্ঘটনায় স্বামী পঙ্গু হওয়ার পর সংসারের অভাব পিছু ছাড়ছিলনা নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের তেড়বাড়িয়া গ্রামের আনেছা বেগমের। ভ্যান চালক স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের আয়েই ছেলে মেয়ে নিয়ে আনেছা বেগমের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু প্রায় ৫ বছর আগে একটি দুর্ঘটনার শিকারে পড়ে স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের সুখের সংসার লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক দুর্বিষহ জীবন নেমে আসে আনেছার সংসারে। সংসারের চিন্তায় চোখে অন্ধার দেখতে শুরু করেন আনেছা। স্বামী -চার ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের হাল ধরেন আনেছা বেগম। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। তার আয়ে সংসারের খরচ মেটানো সহ স্বামীর চিকিৎসাও করতে থাকেন। আধ পেটা খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয় তাদের। এরই মাঝে প্রতিবেশীদের পরামর্শে চাঁচকৈড় হাট থেকে একজোড়া তিতির জাতের চিনা মুরগী কিনে আনেন আনেছা। শুরু করেন চিনা মুরগী লালন পালন। ছয় মাস যেতে না যেতেই ওই চিনা মুরগী ডিম দিতে শুরু করে।ওই ডিম থেকে বাচ্চা উঠিয়ে মুরগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় বাড়িতেই চিনা মুরগীর ছোট খাটোর খামার গড়ে তোলেন আনেছা বেগম। ওই খামারের চিনা মুরগীর ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে চলছে আনেছার সংসার।
আনেছা বেগম জানান, তার খামারে বর্তমানে ৭০টি চিনা মুরগী আছে। গত মাসে ২৫০ টি মুরগীর বাচ্চা বিক্রি করেছেন।ওই টাকা ব্যাংকে জমা করেছেন। এই চিনা মুরগীর এক হালি ডিম ২শ টাকায় অথাৎ একটি ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি বাচ্চা ২শ টাকা করে বিক্রি হয়। বড় এক জোড়া মুরগী ১৬শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মাংসের জন্য ওজন ভেদে বড় মুরগী বিক্রয় হয় ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা। চিনা মুরগীর মাংস সুস্বাদু বলে অনেকে খামারেই কিনতে আসেন। দুর দুরান্ত থেকে কিছু পাইকার ডিম বাচ্চা মুরগী কিনতে আসেন তার খামারে। এসব বিক্রয় করে প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। তাই দিয়েই সংসার চলে তার। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে তার খামারে এসে তাকে পরামর্শ দিয়ে যান। এই চিনা মুরগী পালন করেই এখন তার সংসার খুব ভালভাবেই চলছে। তবে মুরগীর জন্য শক্ত ঘর তৈরি করতে না পেরে মুরগী পালন ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়ছে।একারনে খামারে মুরগীর বাচ্চা ওঠানোর পর পরই তা বিক্রি করে দিই। ওই টাকায় স্বামীর চিকিৎসার পাশাপাশি এক মেয়ের পড়া শুনার খরচ যোগান দিতে হচ্ছে। দুর্ঘটনায় স্বামীর একটি হাত নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা করানোর পর সেই হাত ভাল হতে শুরু করেছে। এখন ভারি কাজ করতে না পারলেও হালকা কাজ করতে পারছেন। স্বামী , ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এখন ১ ছেলে ও ১ মেয়ে তার কাছে রয়েছে। অন্য তিন ছেলে আলাদা সংসার গড়েছে। মেয়েটা স্কুলে পড়ে। শহরের স্কুলে পড়ার খুব ইচ্ছা তার মেয়ের। তিনি চান উচ্চ শিক্ষার জন্য তার মেয়ে শহরের ভাল স্কুলে পড়–ক। আনেছা বেগম বলেন, এই চিনা মুরগীর খামার করার পর থেকে তার সংসারের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছে। এখন আর খাবারের কষ্ট নেই। তবে মুরগীর খাবার ও ঘর নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছি। সরকারী বা বেসরকারী সহযোগিতা বা সহজ কিস্তিতে ঋণ পেলে খামারটি বড় করার ইচ্ছা আছে তার।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইফতেখার বলেন,তিতির জাতের চিনামুরগী পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই। দেশী মুরগীর মতই ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় বা খামার পদ্ধতিতে দুইভাবেই পালন করা যায়। তবে এই মুরগী এখনও বাজারজাত করনের তেমন সাড়া পড়েনি। এটাকে বাজারজাত করনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। এটাকে বাজারজাত করনের জন্য আমরা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অন্যান্য জায়গায় আগ্রহীরা এই চিনা মুরগীর খামার গড়ে তুলছেন। সিংড়াতেও আনেছা বেগমের মত অনেকেই এই খামার গড়ে তুলতে এগিয়ে আসছেন। আমরা আশা করছি তারা লাভবান হবেন। চিনা মুরগী পালনে আগ্রহীদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব ধরনের পরার্মশ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *