বাগাতিপাড়ায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিকাশ প্রতারক চক্র

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটি প্রতারক চক্র বিকাশে জমা হওয়া উপবৃত্তির টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। বিকাশ প্রতারক চক্রটি ইতিমধ্যে উপজেলার অন্তত ১০ জন শিক্ষাথীর করোনাকালীন সহায়তাসহ উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক চক্রটি এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বেছে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি বিকাশ প্রতারক চক্রের প্রতারনার শিকার হয়ে ১৭ হাজার ৫শ টাকা খুইয়েছেন উপজেলার তমালতলা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তিথি খাতুন।
তিথি খাতুন জানান, জুলাই মাসে তিনি মোবাইল ফোনে বিকাশ একাউন্টে উপবৃত্তির টাকা পেয়েছেন। সম্প্রতি মোবাইল ফোনের ওই নম্বরে অপরিচিত নম্বর থেকে প্রতারক চক্রের কল আসে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীর নাম, তার বাবা ও মায়ের নাম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বলে যাচাই করে চক্রটি। এসময় তারা তিথিকে বলে, সে উপবৃত্তির টাকা কম পেয়েছে জানিয়ে বিকাশ একাউন্ট পরিবর্তনের কথা বলে। এরপর সুকৌশলে তার কাছ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী তিথির মা লিপি বেগম বুধবার বাগাতিপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিথি জানায়,শুধু সে একা নয়, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে একই কলেজের আরও চার জন ছাত্রী বিকাশে পাওয়া উপবৃত্তির টাকা খুইয়েছেন। এছাড়া একই কলেজের তানজিলা খাতুন প্রতারক চক্রের ফোন পেয়েও টাকা হারানোর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এর আগে বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের এক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, গতমাসে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা এসেছে। এর মধ্যে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি ও করোনাকালীন সহায়তা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে। এই সুযোগে বিকাশ প্রতারক চক্র কৌশলে অন্তত ১০ শিক্ষাথীর উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভুক্তভোগী, অভিভাবক ও স্থানীয় কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটি প্রতারক চক্র বিকাশে জমা হওয়া উপবৃত্তির টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক চক্রটি এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বেছে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের এসব শিক্ষার্থী সহজ-সরল ও কিছুটা অসচেতন হওয়ায় খুব সহজেই বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য প্রতারকদের দিয়ে দিচ্ছে। বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পর মোবাইল ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে প্রতারক চক্রের কল আসে। কথার মার-প্যাঁচে কৌশলে গ্রামের সহজ-সরল শিক্ষার্থীদের পিন নম্বর সংগ্রহ করে হাতিয়ে নেয় উপবৃত্তির বিকাশ অ্যাকাউন্টের সব টাকা। বিকাশ প্রতারক চক্রটি এভাবে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে গ্রামের সহজ সরল উপবৃত্তিপ্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থী বিকাশ প্রতারক চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে ।
উপজেলার তমালতলা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ জানান, বিকাশে জমা হওয়ার পর তার কলেজের উপবৃত্তি প্রাপ্ত চার জন শিক্ষার্থী প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে বলে তাদের অভিভাকরা জানিয়েছেন। অনলাইনের কোন দূর্বলতার কারনে হয়তো উপবৃত্তি সংক্রান্ত এসব তথ্য কোনভাবে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপর ওই সব শিক্ষার্থীদের কাছে ফোন করে তাদের ফাঁদে ফেলছে। সেকারনে তিনি সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ আলী বলেন, প্রতারনার শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর তথ্য ইতিমধ্যে উর্দ্ধতন বরাবর তিনি পাঠিয়েছেন। তবে কোনো শিক্ষার্থী যাতে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা না দেয় সে ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানানো হচ্ছে। বিষয়টি যেন তারা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন ।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, একজন ছাত্রীর অভিভাবক থানায় এধরনের একটি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা সহ প্রতারক চক্রকে সনাক্ত করার চেস্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, এ ধরনের তিনি কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তবে বিকাশ পিন আদান-প্রদানে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *