গ্রামের কলেজ গ্রামে ফিরিয়ে নিতে গ্রামবাসীর জোট; গুরুদাসপুরের বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ নিয়ে চলছে টানাহেচরা!

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠার পর শহরে স্থানান্তরকৃত বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ নিয়ে চলছে টানা হেঁচরা। গ্রামের কলেজ গ্রামে ফিরিয়ে নিতে আদালতে মামলা দায়েরসহ জোট বেধেছেন ওই গ্রামের মানুষ। কলেজ পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জালাল উদ্দিন শাহ কলেজটি গ্রামে ফিরিয়ে আনতে এবং অধ্যক্ষ সাঈদুল ইসলাম সাঈদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। নাটোরের সহকারি জজ আদালতে দায়ের করা মামলার রায়ে বিজ্ঞ আদালত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই রায় দেন। জালাল উদ্দিন শাহ জানান, রায়ে অধ্যক্ষ সাঈদ কলেজটিতে অনুপ্রবেশ করতে পারবেন না এবং কোনো রেজুলেশন, নিয়োগ প্রদানসহ কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামেই পূর্বের ন্যায় কলেজের কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের কারনে কলেজ নিয়ে চলছে টানাহেচরা। ফলে কলেজের কার্যক্রম ব্যহত হওয়া সহ কলেজের অবস্থান নিয়ে চলছে টানা হেঁচরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, ২০০৯ সালে উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত ছেলে-মেয়েদের কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এলাকাবাসী ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। কলেজের কার্যক্রম ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ সাঈদুল ইসলাম সাঈদ ২০১৫ সালে কলেজটি কৌশলে গুরুদাসপুর পৌর সদরে স্থানান্তর করেন। কলেজটি স্থানান্তরের পর ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী জাতীয়করণ করা হয়। তবে কলেজটি স্থানান্তর করার পর কলেজ পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জালাল উদ্দিন শাহ ২০১৮ সালে নাটোরের সহকারি জজ আদালতে গ্রামের কলেজ গ্রামে ফিরিয়ে আনতে এবং অধ্যক্ষ সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
জালাল উদ্দিন শাহ জানান, এলাকার মানুষের শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ২০০৯ সালের শুরুতে বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে আমাদের দান করা নিজস্ব ১০৭ শতক জমির উপর বঙ্গবন্ধুর নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করি। পাঁচবছর আগে সাঈদ কলেজটির অধ্যক্ষ থাকাকালীন ষড়যন্ত্র করে পৌরসদরের ভাড়া করা জায়গায় স্থানান্তর করেন। প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কতিপয় শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা কামিয়েছেন। কলেজটি গ্রামে ফিরিয়ে আনা সহ অধ্যক্ষ সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলায় বিজ্ঞ আদালত গত বছরের ৮ নভেম্বর স্বাক্ষীপ্রমাণ শেষে সাঈদ ওই কলেজের অধ্যক্ষ নয় বলে রায় দেন। সেই সাথে অধ্যক্ষ সাঈদ কলেজটিতে অনুপ্রবেশ করতে পারবেন না, কোনো রেজুলেশন, নিয়োগ প্রদানসহ কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে সাঈদ হাইকোর্টে আপিল করলেও বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধেই রায় দেন। এছাড়া বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামেই পূর্বের ন্যায় কলেজের কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেন আদালত। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর দাবি, গ্রাম থেকে কলেজটি শহরে নিয়ে যাওয়া অমানবিক ও বেআইনি। এ নিয়ে তারা কোনো দ্বন্দ্বফ্যাসাদ চান না। স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার মানোন্নয়নে গ্রামের কলেজ গ্রামেই ফিরে চান তারা।
কলেজের শিক্ষক জিয়ারুল ও জহুরুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সাঈদুল ইসলাম সাঈদ গ্রামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে টানাহেচরা শুরু করেছেন। রাতের অন্ধকারে শিক্ষক নিয়োগের কাগজপত্রসহ কলেজটি পৌর সদরে নিয়ে যান।
অধ্যক্ষ সাঈদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, জজ কোর্টের রায় একতরফা। আমি এ ব্যাপারে ছানি মামলা করেছি। মামলাটি চলমান রয়েছে।
এদিকে কলেজটি গ্রামে থাকবে নাকি শহরে থাকবে জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মো. তমাল হোসেন বলেন, কলেজ স্থানান্তরের বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলার আপিল চলমান রয়েছে। তাছাড়া সার্বিক বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *