কলেজ করণিকের প্রতারনায়” বিথি’র”জীবন থেকে নষ্ট হওয়া একটি বছরের দায় নিবে কে?

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের করণিক রাজ্জাকের প্রতারনায় জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হলো মেধাবী ছাত্রী বিথি খাতুনের। বিথির উজ্জল ভবিষ্যতের একটি বছর নষ্ট হওয়ার দায় নিবে কে? কালীকাপুর সরদার পাড়া গ্রামের দিন মজুর বাবা নজরুল ইসলামের অভাবি সংসারের সব কাজ করেও এইচ এসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার জন্য রাত জেগে লেখাপড়া করেছেন বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী বিথি খাতুন। অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরিক্ষায় ৪ দশমিক ৫০ পয়েন্টে এবং ৪ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন বিথি। এইচএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল হবে বলে এমন দৃঢ় আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু কলেজের করণিক াাব্দুর রাজ্জাকের প্রতারনার শিকার হয়ে শিকার হয়ে একটি বছর নষ্ট হয় বিথির। সম্প্রতি অটো পাশের ফলাফল প্রকাশ হলেও তালিকায় বিথির নাম নেই। ফরম পুরণের টাকা জমা দেওয়ার পরও সম্প্রতি ঘোষিত রেজাল্টে তার নাম না দেখে বিথি সহ পরিবারের সকলেই মানসিকভাবে বেঙ্গে পড়েছেন।
বিথি খাতুন জানায়, ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের নিয়মিত ছাত্রী চিলেন বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের। ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে কলেজের করণিক আব্দুর রাজ্জাকের নিকট গত বছর ৪ জানুয়ারী ফরম পূরণ বাবদ দুই হাজার পাঁচশত (২৫০০) টাকা প্রদান করেন। ফরম পূরণের জন্য ২৫০০টাকা জমার বিপরীতে তার রোল নম্বর ৩২১ উল্লেখ করে জমা রশিদ বহির ২৪১ নম্বর রশিদ তাকে দেন করণিক রাজ্জাক। তার বোর্ড রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৫১২৬৭৮৯৫৫ ও শ্রেণী রোল ৩২১। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর পাদুর্ভাব দেখা দিলে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থগিত করা হয় সকল পরিক্ষা। এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর মেধা যাচাই করে অটো পাসের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অটো পাসের ফলাফল প্রকাশ হলে বিথি তার নাম রেজল্টসিটে খুজে পায়না। সেদিন অনেক আশা নিয়ে বিথি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন তার রেজাল্ট আসেনি। এমন খবরে সে দিশেহারা হয়ে কলেজের করণিক আব্দুর রাজ্জাক এবং অধ্যক্ষ ছাবিহা সুলতানার কাছে গেলে জানতে পারেন সে নাকি ফরম পুরণ করেননি, তাই তার প্রবেশ পত্র ও রেজাল্ট আসেনি। একথা শুনে মাথায় বাজ পড়ে তার। চোখে ান্ধকার দেকতে পায় সে দিশেহারা হয়ে পড়ে বিথি। এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন বিথি সহ তার পরিবারের সদস্যরা।
বিথি খাতুন বলেন, আমি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধিনে বাশঁবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের এইচ এস সি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমার রেজাল্ট না আসায় কলেজ থেকে আমাকে দোষারপ করা হচ্ছে। করণিক রাজ্জাক আমার ফরম পূরণের ২৫০০ টাকা আতœসাৎ করে আমার জীবন থেকে ১টা বছর নষ্ট করে দিয়েছেন। আমি এটার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার রেজাল্ট চাই। সেজন্য আমি বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের করণিক আব্দুর রাজ্জাক আমার ফরম পূরণের ২৫০০টাকা আতœসাৎ করেছে মর্মে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় শিক্ষাসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকা, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।
এবিষয়ে বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের করণিক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, এই পরিক্ষার জন্য বিথি ফরম পূরণ করেনি তাই তার রেজাল্ট আসেনি। ফরম পূরণ বাবদ ২৫০০ টাকা নিয়ে টাকা জমার রশিদ দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেন, না এই নজরুলের মেয়ে বিথি কলেজে আসেনি ফরম পূরণ করেনি তাকে কোনো টাকা জমার রশিদও দেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে টাকা আতœসাৎ এর অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরক্ষনের কথা ঘুরিয়ে বলেন, বিথি নামে দুইজন পরীক্ষার্থী থাকায় এই সমস্যা হয়েছে। অসংলগ্ন কথা বলে লাইন কেটে দেন তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ ছাবিহা সুলতানার কাছে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে তিনিও ঠিক ওই করণিক রাজ্জাকের মত একই কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রতিবেদকের কথার সঠিক উত্তর না দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। সোমবার কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থী বিথির রেজাল্ট আসেনি কেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ছাবিহা একই কথা বলে দায় এড়িয়ে যান। তবে তিনি আরো বলেন, আমি সহ আমার সকল শিক্ষক ওই মেয়েকে বলেছি যা হওয়ার হয়েছে সামনে বছর ফরম পূরণের জন্য বিথিকে কোনো টাকা দিতে হবেনা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের ব্যাবস্থা করবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহাদ আলী সরকার জানান, এধরনের কোন অভিযোগ বা কাগজপত্র তিনি পাননি।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল সাংবাদিকদের বলেন,আমি অভিযোগটি পেয়েছি এবং তদন্তের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *