বাগাতিপাড়ায় এক এসআই এর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে এলাকাবাসীর ঝাড়ু মিছিল

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পাঁচ বছর আগের এক লাশ উদ্ধারের পর তদন্তকারী এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানি-নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করেছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার দুপুরে বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা বাজারে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছির করে এলাকার নারী-পুরুষ সব বয়সীর মানুষ। এসময় পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন,কলেজ শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন,গৃহবধু বৃষ্টি বেগম,ফরিদা বেগম,বিনা রানী ,আব্দুস সামাদ,নজরুল ইসলাম সহ এলাকার নির্যাতিত অন্ত অর্দশত নারী-পুরুষ বক্তব্য রাখেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন,২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পাঁকা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের রেল লাইনের পাশ থেকে স্থানীয় স্বর্নকার সাধন কর্মকারের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।রেলওয়ে ও সিআইডির হাত ঘুরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পিবিআই রাজশাহীর এসআই সাইদুর রহমানের ওপর। তদন্তে নেমেই এলাকার শিক্ষক,চাকরিজীবী,ব্যবসায়ী সহ সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজনকে ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে। না পেয়ে বৃহস্পতিবার(২৪ ডিসেম্বর) ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। এলাকাবাসী ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
আব্দুস সামাদ বলেন, তদন্তের সময় এসআই সাইদুর তাকে ধরে নিয়ে তিন দিন আটক রাখে। পরে ৭০ হাজার টাকায় তিনি ছাড়া পান। তাকে আদালতে তোলা হয়নি।
ফরিদা বেগম বলেন, টাকা দিতে না পারায় তার মাসুম বাচ্চা সোহাগকে মামলার আসামী করা হয়েছে। এবার সে মাট্রিক পরীক্ষ দিবে। প্রতিবেশী রিনা রানী বলেন সোহাগ সহ যেসব মাসুম বাচ্চা এখনও মুরগি জবাই করতে জানেনা তাদেরকে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। শুধু টাকা দিতে না পারায় এসআই সাইদুর ওই মাসুম বাচ্চাকে আসামী করেছে । এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান তিনি।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পারিবারিকভাবে বিরোধ থাকায় তার আপন ভাগিনা রাজশাহী পিবিআইয়ে কর্মরত এসআই মহিদুর ও ভাইরা ভাই এসআই দেলোয়ারের যোগসাজসে তাকে সহ এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকদের আসামী করেছে এসআই সাইদুর। এসআই মহিদুর ও এসআই দেলোয়ারের বাড়ি আমাদের এলাকায়। সেকারনে তাদের দেয়া তালিকায় এলাকার সম্ভ্রান্ত মানুষদের কাছে এই মামলায় আসামী করার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করা হয়। যারা দিয়েছেন তারা নির্যাতন থেকে রক্ষা পেলেও মামলা থেকে রক্ষা পাননি। মামলার বাদীকে দিয়ে প্রায় ২০ রাখ টাকা দাবী করা হয়েছে। তিনি এই মামরার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানান।
এলাকাবাসী বিশিষ্টজনরা বলেন, পিআইবি তদন্ত শুরু হওয়ার আগে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা ও পাবনার সিআইডি তদন্ত করে কিছু না পেয়ে চুরান্ত প্রতিবেদন দেয়। পরে তদন্ত শুরু করে পিআইবি জমসেদ মন্ডল,রিংকু ও সালাম মন্ডল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে তিনদিন আটক রেখে নির্যাতন করার পর ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে সামাদ মন্ডলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অপর দুই জনের মদ্যে জমসেদ আদারতে দোষ স্বীকার না করায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। এর পর রিপন নামে এক দিনমজুরকে ধরে নিযাৃতন করে দোষ স্বীকার করানো হয়। কিন্তু জমসেদ ও রিপনের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দির কোন মিল নেই। জমসেদ তার স্বীকারোক্তিতে বলেন,ঝিনা এলাকার রেলগেট সংলগ্ন পেয়ারা বাগানে এবং রিপনের দেয়া স্বীকারোক্তিতে বলা হয়েছে ,পাকা মরাঘাটি  ( শ্মশান ঘাট) এলাকায় এই খুনের ঘটনা ঘটে বলা হয়েছে। এই দুটি স্থানের দুরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এতেই প্রমান হয়, নির্যাতনের কারনে তারা এধরনের গল্প বানিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেছে।
এই মামলার বাদী সন্তোষ কুমার কর্মকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন টাকা দিলেই মামলা থাকবেনা।
এসআই সাইদুর রহমানের সাথে সাংবাদিকরা তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, আটক আসামীদের দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি ও তথ্যের ভিত্তিতেই আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে।  তিনি কারো কাছে টাকা দাবী বা কাউকে নির্যাতন করেননি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *