গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে ভূল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ


নাটোর অফিস
নাটোরের গুরুদাসপুরে হাজেরা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক নামের একটি বে-সরকারি হাসপাতালে (ক্লিনিকে) রত্না খাতুন (৩১) নামে এক প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেলের বিরুদ্ধে। রোববার সকালে প্রসুতি রত্না কাতুনের সিজার করার পর সে মারা যায়। এদিকে এই অপমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, শনিবার রাত ১০টার দিকে পৌরশহরের চাঁচকৈড় কাচারীপাড়ার হাজেরা ক্লিনিকে ওই প্রসুতি রত্না খাতুনকে ভর্তি করা হয়। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রসুতির অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রপচারের পর পরই তার মুত্যু ঘটে। পরিবারটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ওই চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু ঘটেছে তার।
অপমৃত্যুর শিকার রত্না খাতুন উপজেলার মশিন্দা মাঝপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী। বিয়ের ১৫ বছর পর প্রথম সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার জন্য ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। অপারেশনের পর ছেলে সন্তান হয় রত্নাবেগমের। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে স্বামী সহ পরিবারের সদস্য ক্ষুব্ধ হন।
রত্নার স্বামী মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, অপারেশনের ১৫ মিনিটের মধ্যেই তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। মারা যাওয়া ‘রোগীর অবস্থা খারাপ’ বলে দ্রুত রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আমিনুল ইসলাম সোহেল। রোগীর স্বজনদের না জানিয়ে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে জোরপুর্বক প্রসুতিকে রাজশাহী নেওয়ার জন্য তুলে দেওয়া হয়। পরে রোগীর স্বজনরা ওই এ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য  কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।


গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শাহানারা খাতুন বলেন, রোগী (রত্না বেগম) মৃত্যুর আধাঘন্টা পর হাসপাতালে আনা হয়। একারনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।
রত্নার স্বামী মনিরুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন, ডা. সোহেল নিজেই এনেসথেসিয়ার কাজ করেছেন বলেই তার স্ত্রী মারা গেছে। তবে কিনি¬ক কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন এনেসথেসিয়ার কাজ করেছেন ডা. ফাইজুন নাহার দৃষ্টি। যদিও তার কোন এবিষয়ে কোন ডিগ্রী নেই বলে দাবী এলাকাবাসীর। তারা এত বড় পশু তার স্ত্রীর মারা যাওয়ার পর নবজাতককেও ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। মনিরুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ওই ক্লিনিকে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। ক্লিনিকটির বর্হিবিভাগের মেঝেতে রোগীর এক স্বজনের কোলে ওই নবজাতককে দেখা যায়। এনিয়ে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য তিনি থানায় অবস্থান করছেন বলে তিনি জানান। ওই ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসক মো. আমিনুল ইসলাম সোহেল র্তমানে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক বলে জানান প্রসুতির স্বামী মনিরুল ইসলাম। ডাক্তার আমিনুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর তার স্ত্রীর খিুচনী শুরু হয়।এরপর রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি কর্মস্থল নাটোরে চলে যান। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপোসের চেষ্টা চলছে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন,অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই ক্লিনিকে ১০ বেডের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সে মেতাবেক স্টাফ নেই। সেখানে ২২টি বেড নিয়ে চলছে কার্যক্রম।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে জানান, রোগী মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। অভিযুক্ত ডাক্তার কিংবা ক্লিনিকের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকলে খতিয়ে দেখে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *