নাটোরে বন্যার পানিতে জাল ফেললেই উঠছে মাছের ঝাঁক

নাটোর অফিস॥
বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে চলনবিল। পানির তোড়ে ভেসে গেছে তিন শতাধিক মাছের ঘের। ঘের থেকে এসব মাছ ভেসে ভেসে খাল, বিল, নদী, লোকালয়ে চলে আসছে। এই অবস্থার সারা বিল জুড়েই এখন দেশী-বিদেশী মাছের রাজত্ব।
ঘের ও পুকুরগুলোতে চাষ করা কার্প জাতীয় মাছের সাথে একাকার হয়ে পানিতে ভাসছে দেশী মাছ। ছোট ছোট জালগুলো নদীতে কিছুক্ষণ ফেলে রাখলেই তাতে আটকা পড়ছে বিলের সুস্বাদু দেশী মাছগুলো।

গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যা আর বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন।

স্বাভাবিক সময়ে বর্ষকালে বন্যার পানিতে ভেসে আসে বিলুপ্তপ্রায় অনেক দেশী মাছ। এবার এর সাথে বন্যার পানি যোগ হওয়ায় বেড়েছে মাছের সংখ্যাও। পুঁটি, চিংড়ি টেংরা, খলসে, শোল, টাকি, বোয়াল, পাবদা, কই মাছ মিলছে বেশি। তাই চলছে মাছ ধরার উৎসবও। প্রথমদিকে এসব মাছ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে প্রতিকেজি বিক্রি হয়।

ভাগনাগরকান্দি গ্রামের দোকানী ইউসুফ হোসেন জানান, তিনি গত তিন দিন ধরে বানের পানিতে ভেসে আসা পাঁচ কেজি খলসে ও পুঁটি মাছ ধরেছেন।

ছাতারদীঘী ইউনিয়নের মাছ ব্যবসায়ী মিঠু শেখ জানান, বন্যার পানিতে ভেসে আসা মাছগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব মাছ স্থানীয় বাজারেই বেশি বিক্রি হচ্ছে।

চামারী ইউনিয়নের বিলদহর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষাকালে এই বাজারে বিলের দেশী মাছের চাহিদা বেশি থাকে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ কিনতে আসেন অনেকে। অন্য সময় কার্প জাতীয় মাছ বেশি কেনে মানুষ।

এদিকে, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের শেরকোল এলাকায় রাস্তার পাশে বরশি নিয়ে শত শত মানুষ ব্যস্ত মাছ শিকারে। একেকজন মানুষ প্রতিদিন দুই থেকে তিন কেজি করে বিভিন্ন প্রকার দেশী মাছ ধরছেন। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের মা ও পোনা মাছ। বর্ষাকালে আগে থেকেই বিলের পানিতে প্রজনন সম্ভাব্য মাছও আটকা পড়ছে শিকারীর বরশিতে। এতে ব্যহত হচ্ছে মাছের প্রজননও।

চলনবিল পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি এস এম রাজু আহমেদ বলেন, ‘মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেকে পোনা মাছও ধরছেন। বর্তমান প্রজনন মৌসুমেই এই সব পোনা মাছ আরো মাছের জন্ম দেয়। যারা মাছ শিকার করছেন তারা পোনা মাছগুলো ছেড়ে দিলে চলনবিল মৎস্য সম্পদে আরো সমৃদ্ধ হবে।’

সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওয়ালী উল্লাহ বলেন, বছরের এই সময়ে চলনবিলে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি অনেক সৌখিন শিকারীও মাছ শিকার করেন। শিকারীদের মধ্যে পোনা মাছ সংরক্ষণ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পোনো মাছ শিকার থেকে
‌বিরত থাকলে আমাদেরই লাভ। এ ব্যাপারে নিজেদের সচেতন থাকার বিকল্প নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *