নাটোরে রেলের ৬০ কুলি-কর্মচারী ত্রাণ পাননি

নাটোরঃ রেলের চাকা থেমে যাওয়ার সাথে সাথে থেমে গেছে ওদের ভাগ্যের চাকা। অসহায় মানুষদের মধ্যেও এখন অসহায় ওরা। ওরা রেল শ্রমিক, কুলি, মুটে-মজুর। ঘরে ওদের স্ত্রী-সন্তান বা বৃদ্ধ মা-বাবা। ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে তিলে তিলে গড়া ওদের সঞ্চিত অর্থ। ঘরে খাবারও বাড়ন্ত। ক’দিন পর কিভাবে প্রিয়জনদের দু’মুঠো খাবার দেবেন তারা, ভীষণ উদ্বিগ্ন এ নিয়ে ওরা।
জীবনের পুরোটা সময় রাত-দিন স্টেশনে যাত্রীদের সেবায় কাটানো এ মানুষগুলো একটু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার আশ্রয় এখনো খুঁজে ফিরছে নিঃস্তবদ্ধ নাটোর রেল স্টেশনে।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে রেল চলাচল বন্ধ হওয়ায় একযোগে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নাটোর রেল স্টেশনের ৬০ জন কুলি-মজুর-কর্মচারী। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন তারা।  এখন পর্যন্ত মেলেনি সরকারী-বেসরকারী কোনো ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা।

জানা যায়, নাটোর রেল স্টেশনে ১৭ জন কুলি, ২৪ জন কর্মচারী, একজন স্টেশন মাষ্টারসহ মাষ্টাররোলে কাজ করেন ৭ জন কর্মচারী। এদের মধ্যে ৩ জন পয়েন্টস ম্যান, এক জন গেইট ম্যান ও ২ জন পোর্টার।

ষাটোর্ধ কুলি নবীর উদ্দিন বলেন, ‘ ত্রিশ বছর ধরে রেল  যাত্রীদের মালামাল বইয়েই জীবন চলেছে। এখন ট্রেনও চলে না,আয়ও নাই। পরিবারের নয়জন সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

স্টেশন প্লাটফর্মের চা দোকানী আব্দুস সবুর বলেন, ‘জানিনা কতোদিন এভাবে বন্ধ চলবে। খুব বেশি দিন এই অবস্থা চললে কিভাবে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে তুলে দেবেন দুমুঠো খাবার, সেই ভাবনায় রাতে ঘুম আসে না।’

কুলি আবুল কালাম বলেন, ‘সুখ-দুঃখ বিপদে আপদে এই স্টেশনে কুলিগিরির আয়ই ছিলো জীবিকা। এখন নেই। মনটা পড়ে থাকে স্টেশনে। আগামী দিনগুলোতে কিভাবে চলবো, সে চিন্তা মাথায় এলে ঘরে থাকতে পারি না।’

এদিকে, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ তৈরি ও কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত ডিজেলসহ বিভিন্ন প্রয়োজনী মালামাল নিয়ে চলাচলকারী মালবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘন্টাই কর্মস্থলে থাকতে হচ্ছে। ততাদের অনেককেই দুর থেকে আসতে হয়। সড়ক লকডাউনের কারনে যানবাহনের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের হেটে চলাচল করতে হয়।

নাটোর স্টেশন মাস্টার অশোক কুমার চক্রবর্তী জানান, রেলের কুলি-মজুর ও কর্মচারীরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় তাদের জন্য ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তার অবেদন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেটুকু খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে, তা খুবই কম। দুর্ভোগ নিয়ে কাজ করে গেলেও রেলের কর্মচারীদের জন্য বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে কোন সুযোগ সুবিধা নেই। ব্যাংক সহ অন্যান্য দপ্তর বা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা থেকে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *