নাটোরে বেগুন পঁচছে চাষীর ঘরে

নাটোর অফিস॥
জনসমাগম কমাতে বন্ধ করা হচ্ছে নাটোরের গ্রামীণ হাটগুলো। হাট বন্ধ থাকায় নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেগুন বাজারজাত করতে পারছেন না চাষীরা। ফলে কমছে বেগুনের দাম। একসপ্তাহ আগেও বেগুন এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন দাম নেমেছে অর্ধেকেরও কমে। এতে কৃষকরা ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কোনো কোনো কৃষক ক্ষেতে পচার ভয়ে বেগুন তুলে বাড়ির উপর ৭ থেকে ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এতে কখনো ক্ষেতের বেগুন ক্ষেতেই বা কৃষকের ঘরে পঁচছে।

আজ শনিবার(২৮শে মার্চ) সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। এছাড়া জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও বেগুনের দাম পাচ্ছেন না চাষীরা।

জানা যায়, গত রমজানে বেগুনের ব্যপক চাহিদা থাকায় আসন্ন রমজান মাসকে টার্গেট করে জেলায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমিতে বেগুনের আবাদ করেন চাষীরা। এসব বেগুন মার্চের শেষদিকে বাজারে সরবরাহের আশা করেছিলেন কৃষকরা। কিন্ত আকস্মিক করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। এতে সার্বিক পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হলে জেলার বাইরে বেগুন বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতেও চাহিদা কমতে থাকে বেগুনের। বেগুন তোলার এই সময় অনেক চাষী বেগুন তুলে বিক্রি করতে পারছেন না। হাট বন্ধ থাকায় অনেক চাষী বাড়িতে রেখেই বেগুন বিক্রি করছেন। যেখানে শহরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়, সেখানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ১০ টাকা কেজিও মিলছেনা দাম। তার উপর যৎসামান্য বেগুন বিক্রি হলেও বেশিরভাগ বেগুন অবিক্রিত থাকছে। এতে কৃষকের ঘরেই পচছে অবিক্রিত বেগুন। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেতের বেগুন ক্ষেতেই পচতে শুরু করেছে।

সদর উপজেলার পুকুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চাষী রুবেল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম। ৮ মন বেগুন তুলেছিলেন। ৮ মণ বেগুন ২৬০০ টাকায় বিক্রি করি।

সদর উপজেলার ধরাইল দিয়ারপাড়া গ্রামের চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। হাট বন্ধ, বাজারেও বেগুনের দাম নেই। এই অবস্থায় ক্ষেতের বেগুন তোলা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

নলডাঙ্গার ব্রহ্মপুর গ্রামের আবু সাইদ জানান, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার নলডাঙ্গা হাট থেকে সাভার, গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা বেগুন কিনে নিয়ে যান। এখন করোনার কারণে হাট বন্ধ, মহাজনরাও আসছেন না। এই অবস্থায় আজ ৫ মন বেগুন নিয়ে ফিরে এসেছি। এসব বেগুন বেঁচতে না পারলে গরুকে খাওয়াতে হবে।

গুরুদাসপুরের মশিন্দা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, চার মণ বেগুণ তুলে আর বিক্রি করতে পারছি না। কিছু বেগুন পঁচে গেছে এখন ঘরে পঁচার অপেক্ষায় আছে কিছু বেগুন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, শুধু বেগুন নয়, এই সংকটকালীন সময়ে যে কোনো পচনশীল সবজিরই দাম পাচ্ছে না কৃষক। পচনশীল সবজির নায্য দাম নিশ্চিতে আমরা একটি হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাবনা রেখেছি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। এটি বাস্তবায়িত হলে কৃষক ফসলের নায্য দাম পাবে। তার আগে আমাদের কিছুই করার নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *