নাটোরে মাদ্রাসাছাত্রী হত্যায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে অপমৃত্যু মামলা!

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের মৎসজীবী পাড়ার মাদরাসা ছাত্রী হালিমা খাতুনের(১২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার(৪ঠা নভেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় গাড়ফা দাখিল মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সে ওই মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

মাদরাসা ছাত্রী হালিমার মৃত্যুতে মৎসজীবী পাড়ায় শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবী করে স্থানীয়রা লাদেন দেওয়ান(২৩) ও ছোটন মিয়া(১৯) দুই যুবককে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে সোমবার দুপুরে বড়াইগ্রাম থানায় লাদেন ও ছোটনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হালিমার বাবা হাসেন আলী। তবে অভিযোগের রিসিভ কপি দেয়নি পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রসায় যাতায়াতের পথে হালিমাকে উত্যক্ত করতো বখাটে লাদেন দেওয়ান। এ বিষয়ে বারবার গ্রাম প্রধান ও লাদেনের পরিবারের কাছে বিচার দিয়েও কোন লাভ হয়নি। গত জুন মাসে লাদেনকে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বিয়ের কয়েকমাস পর থেকে লাদেন আবারো হালিমাকে উত্যক্ত করা শুরু করে। সবশেষ গত রোববার(৩রা নভেম্বর) লাদেন হালিমাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের পর ছোটনের সহায়তায় হত্যা করে বটগাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।

তবে পুলিশের দাবী, তারা কোন লিখিত অভিযোগ পাননি। তাই ঘটনাটিকে অপমৃত্যু হিসেবে ধরে ইউডি মামলা রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে সপরিবারে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত লাদেন ও ছোটন।

হালিমার প্রতিবেশীরা জানান, হালিমাদের বাড়ী থেকে ত্রিমোহনী বিল, যেখানে বটগাছে হালিমার মৃতদেহ ঝুলছিলো, তার দুরুত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। বিলটি পানিতে ডুবে থাকায় নৌকা ছাড়া সেখানে যাবার উপায় নেই। যে বটগাছের ডালের সাথে মরদেহটি ঝুলে ছিলো তা মাটি থেকে ১০ ফুট উচুঁ। হালিমা আত্নহত্যা করলে নিজে থেকে কোনভাবেই গাছের ডালের নাগাল পাওয়া সম্ভব না। ঘটনাস্থল থেকে আরো আধা কিলোমিটার দুরে গিয়ে একটি সেতুর এককোণে পাটের বস্তা, রক্তের দাগের চিহ্ন রয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হালিমার পরিবার।

হালিমার বাবা হাসেন আলী রাত সাড়ে ৯টায় জানান, তিনি থানায় গেলে একজন উপ-পরিদর্শক অভিযোগটি লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেন। কিন্ত কোন রিসিভ কপি ফেরত না দিয়ে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের আচরণ রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

নিহত হালিমার বড় বোন রহিমা খাতুন জানান, মৃতদেহ নামানোর পর এসময় হালিমার সালোয়ার রক্ত দেখা যায়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় হালিমাকে হত্যা তো করা হয়েছেই বরং হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।

হালিমার মা মোমেনা বেগম বলেন, হালিমা পড়াশোনায় ভাল ছিল। লাদেন তাকে প্রায়ই উত্যক্ত করলেও মাদরাসা ছাড়েনি সে। আমরা মেয়ের নিরাপত্তার জন্য অনেকবার গ্রামের মুরুব্বীদের বলেছি। তারা আমার মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারেনি। চলে গেল মেয়েটা। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

হালিমার ফুফাতো ভাই স্থানীয় ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আনতাজুল ইসলাম বলেন, হালিমাকে হত্যার পর থেকেই ঝুলিয়ে রেখে আত্নহত্যা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ হালিমাকে সেতুর উপর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে যার আলামত রয়েছে। আমরা পুলিশের রহস্যজনক আচরণে অবাক। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করছেনা পুলিশ। এছাড়া অভিযুক্তদের ধরতে এখনও পুলিশের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই।

বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস কোন লিখিত অভিযোগ পাননি মন্তব্য করে সোমবার রাতে জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রতিবেদন পেতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(এএসপি) হারুন-অর-রশীদ জানান, যে কোন মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যদি ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া যায় তবে অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রুপান্তর হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনাটি দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, হালিমা দীর্ঘদিন থেকে উত্যক্ত করে আসছিলো অভিযুক্ত লাদেন। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে জরুরী কথা বলার নাম করে হালিমাকে বাড়ির বাইরে ডাকে লাদেন ও তার বন্ধু ছোটন। বাড়ির লোকজন কিছুক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনতে পেলেও একসময় তা থেমে যায়। তখন বাড়ির বাইরে গিয়ে হালিমাকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করে তারা। ভোররাতে মাছ শিকারে যাবার পথে কয়েকজন জেলে বাড়ির অদূরে ত্রিমোহনী বিলের মাঝে বটগাছে একটি মৃতদেহ ঝুলতে দেখে কাছে গিয়ে হালিমাকে সনাক্ত করে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *