নাটোরে মিটারই নেই, বিদ্যুত বিল এলো ৯৬২৭ টাকা!

নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের একটি ওয়েন্ডিং দোকানে দেড় হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল ৪৫ হাজার টাকা আসার পর এবার এক চা দোকানের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ২৩ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, একটি চুরি যাওয়া মিটারেরও বিল এসেছে ৯ হাজার টাকা। মিটার রিডারদের খাম খেয়ালিপনায় তৈরী অস্বাভাবিক বিলের প্রতিবাদ করতে পল্লী বিদ্যুত অফিস পর্যন্ত গেলেই বিদ্যুত বিভাগের লোকজন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন গ্রাহক।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনস্থ সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারী বিলে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক ব্যবহারের এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা।

উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের শাহী বাজারের চা বিক্রেতা আবুল কালামের বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছেন এক মাস যাবৎ। মিটারের প্রথম বিল দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। প্রথম মাসে তার দোকানের বিল এসেছে ২৩ হাজার ৫শ’ টাকা। আবুল কালাম বলেন, আমার ছোট্ট চায়ের দোকন। এর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। সন্ধ্যার পর থেকে রাতে দোকান খোলা রাখা পর্যন্ত আলো জ্বলে শুধু। অথচ প্রথম মাসে বিদ্যুতের বিল এসেছে ২৩ হাজার ৫’শ টাকা। বিল দেখে আমি পল্লী বিদ্যুত বরাবর অভিযোগ করেছি। কর্তৃপক্ষ বিলটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।

অপরদিকে, প্রায় ৬ মাস ধরে একই এলাকার আফাজ উদ্দিনের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিদ্যুতের মিটার চুরি হলে তিনি আর সংযোগ নিতে আগ্রহবোধ করেননি। মিটার চুরির পর কোন বিল না এলেও হঠাৎ করে সেপ্টেম্বর মাসের বিল দিয়ে গেছেন পল্লী বিদ্যুতের লোকজন। বিল এসেছে ৯ হাজার ৬২৭ টাকা।

আফাজ উদ্দীন জানান, গত চৈত্র মাসে তার বিদ্যুতের মিটার চুরি হয়ে গেছে। হঠাৎ করে বিলের কপি হাতে পেয়ে অবাক হয়েছি। ভূতুড়ে বিলের কথা শুনেছি। ভুতুড়ে বিলের শিকারও হয়েছি। কিন্ত মিটার না থেকেও এমন অদ্ভুদ বিল তৈরী হতে পারে এমনটি ধারণা ছিলো না। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের অফিসে বার বার বলেও কোন কাজ হয়নি।

সিংড়া পৌর এলাকার বালুয়া-বাসুয়া মহল্লার সুমন মাহফুজ বলেন, প্রতিমাসে আমার বিল আসতো ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে বিল এসেছে ৪ হাজার ৪৭৫ টাকা। বিলের ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের অফিসে কথা বলতে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এসেছিল কর্মচারীরা। তাই বাধ্য হয়েই বেশী বিল পরিশোধ করেছি।

স্থানীয় ইউসুফ আলীর জানান, তার বাড়িতে কেউ না থাকায় বিদ্যুতের ব্যবহার অনুযায়ী কম বিল আসতো। কিন্ত কয়েক মাস আগে থেকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা বিল আসতে শুরু করে। অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত বিল আসার প্রতিবাদ করলে আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

ইটালী ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের ওমর ফারুক ও হাতিয়ান্দহ এলাকার আবু তাহের জানান, বর্তমানে আগের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশী বিল আসে। বেশ বিল না দিলেও বিপদ আবার বেশী বিলের কারণ জানতে চাইলেও বিপদ। আমরা এই নৈরাজ্যের প্রতিকার চাই।

এর আগে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রাখালগাছা বাজারের ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের দোকান মালিক শাহাদত হোসেনের সেপ্টেম্বর মাসের বিদ্যুৎ বিল আসে ৪৫ হাজার ৬০৬ টাকা, যা আগস্ট মাসে ছিল ১ হাজার ৭১৯ টাকা ও জুলাই মাসে এসেছিল ১ হাজার ২৮৬ টাকা।

শাহাদত হোসেন বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আমার ওয়েল্ডিং দোকানে মোট ১১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। মিটার ভাড়া ১০ টাকা ও ভ্যাট ৬২ টাকাসহ মোট নিট বিল করা হয়েছে ১২৮৬ টাকা। আগস্ট মাসে ১৫৫ ইউনিটের বিপরীতে ৮২ টাকা ভ্যাট ও অন্যান্যসহ মোট বিল করা হয়েছে ১৭১৯ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ৪২১৩ ইউনিটের বিপরীতে মিটার ভাড়া ও ভ্যাট ২১৭২ টাকা ধরে মোট বিল করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৬ টাকা, যা শুধু অসম্ভবই নয়, অবাস্তবও।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রেজাউল করিম বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, অস্বাভাবিক বিলের ব্যাপারে জানিনা। তবে গ্রাহকদের যেকোন অভিযোগ পর্যালোচনা করা হবে। সেখানে কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে সমাধান করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *