নাটোরে সেনাপ্রধান, সৌদি আরবের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রক্রিয়াধীন

নাটোর অফিস
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মাইল অপসারণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ হতে সেনা সদস্য মোতায়েনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ হতে ১৭০০ জনবলের ২টি ডি-মাইনিং ব্যাটালিয়ন এবং ডিএমসি সদর দপ্তরের সাথে ১৮জন জনবল সৌদি আরবের জাযান ও নাজরান এলাকায় নিয়োজিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হতে ‘মেমরেন্ডাম অব আন্ডার্সট্যান্ডিং’ সৌদি কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে যা  অনুমোদনের পর চুড়ান্তভাবে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৯শে অক্টোবর)নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে ১ও ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ৫ ও ৭ আর ই ব্যাটালিয়নকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান শেষে নিজ ভাষণে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনীর প্রধান।

আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অনান্য আর্মস  ও সার্ভিসের সাথে কোন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের অাধুনিকায়নেও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও সদর দপ্তর ২৪ এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ইতোমধ্যে ২টি ইসিবি ব্যাটালিয়নের(এডহক)সাংগঠনিক কাঠামো স্থায়ীকরণের কাজ চলমান রয়েছে এবং ৩য় ইসিবি ব্রিগেড হিসেবে আরো একটি ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’এর অধীনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি পারমাণবিক ও ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা সেলের (এনএসপিপি) সাংগঠনিক কাঠামোয় একটি কম্পোজিট ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া এবং কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন এটিপি প্রণয়নসহ নির্দিষ্ট আরও ২০টি এটিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনী অংশীদার থাকতে চায় মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি  প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায়সহ আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে এবং কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে সদর দপ্তর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড ‘বর্ডার রোড প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নের কাজ পরিচালনা করছে।’

স্যাপার্স সদস্যদের মৌলিক প্রশিক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অত্যাধুনিক ও বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। তাই মৌলিক প্রশিক্ষণের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সর্বোচ্চ ব্যাবহারের জন্য প্রশিক্ষণেও উৎকর্ষতা আনতে হবে। কোন প্রশিক্ষণই ফলপ্রসু হবে না যদি মৌলিক প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকে।’

রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্ত ৪টি ব্যাটালিয়নের সৈনিকদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, চলতি বছরের ১১ই এপ্রিল  ৯ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদানের মাধ্যমে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ইউননিটগুলো এই প্রথা চালু হয়েছে যার ধারাবাহিকতায় আজ ৪টি ইউনিটকে এই মর্যাদাপূর্ণ কালার প্রদান করা হল। রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি যে কোন ইউনিটের জন্য বিরল সম্মান ও পবিত্র আমানত। কর্মদক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম এবং কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরুপ অর্জিত পতাকার মর্যাদা রক্ষায় যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সচেষ্ট থাকতে হবে।’

ভবিষ্যত যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তত থাকতে সেনা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষায় জাতীয় যে কোন প্রয়োজনে সেনা বাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তত থাকবে।’

প্যারেড ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোন একটি বিশেষ দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের পক্ষে নই আমরা। আমরা প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সাথেই করতে আগ্রহী। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী এখন। তাই উন্নতমানের ট্যাংক, মিসাইলসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। আমরা দাম দিয়ে ভালো জিনিসই কিনবো। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয়া শুরু হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, সেনাবাহিনীর বগুড়া এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল সাইফুল আলম, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম হাফিজ আকতার, অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অন-রশীদ, কাদিরাবাদ সেনানিবাসের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম,নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ উধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, অসামরিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং ইঞ্জিনিয়ার কেরের সামরিক ও অসামরিক সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *