নাটোরে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবী জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চার শহীদকে স্মরণ

নাটোর অফিস॥ প্রতি বছর ১ লা সেপ্টেম্বর নাটোরের চার বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান রেজা, গোলাম রব্বানী রঞ্জু, সেলিম চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম বাবুলকে স্মরণ করে নাটোরবাসী। পাশাপাশি দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে পালন করে। তবে এ দিনটির নেই রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। তাই প্রশাসনিকভেবে কখনই পালিত হয়না দিনটি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারগুলোর স্বজনরা।

একাত্তরের আজকের এই দিনে পাকসেনা এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন মজিবর রহমান রেজা ও গোলাম রব্বানী রঞ্জু। অপর দুই শহীদের মধ্যে বাবুলকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে ৭১ এর ২০ এপ্রিল হত্যা করে এবং সেলিম চৌধুরী নওগাঁর রণাঙ্গনে ১লা ডিসেম্বর শহীদ হন। এর পর থেকে একই দিনে দুজনের শহীদ হবার তারিখেই প্রতিবছর ১লা সেপ্টেম্বর চার শহীদকে একসাথে স্মরণ করা হয়।

জানা যায়, একাত্তরে নাটোরের তৎকালীন ছাত্রলীগ ও সংগ্রাম পরিষদ নেতা মজিবর রহমান রেজা এবং গোলাম রব্বানী রঞ্জু ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তবে পাকিস্তানী দোসরদের প্রতরণার শিকার হয়ে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হাতে ধরা পরেন। পাকবাহিনী উপজেলার মশিন্দা এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর ১ সেপ্টেম্বর তাদের হত্যা করে। হত্যার পর তাদের মৃতদেহে পেরেক ঢুকিয়ে ও সিগারেটের ছাঁকা দিয়ে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়। মৃতদেহ না পাওয়ায় অপর দুই শহীদ সেলিম ও বাবুলের পরিধেয় কাপড় একই স্থানে কবর দিয়ে প্রতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হয়।

এই চার শহীদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তাদের বিচার হয়নি। মুক্তিযোদ্ধদের হত্যাকারী চিহ্নিত ২৪ রাজাকার-আলবদরের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে শহীদ মজিবর রহমান রেজার ভাই বিপ্লব হোসেন বাদি হয়ে মামলা করেন। কিন্তু মামলার কোন অগ্রগতি নেই। এছাড়া শহীদদের পরিবারের অসম্মতি ও বিরোধের কারনে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে পৌরসভার অত্যাধুনিক শহীদ বেদী নির্মাণের উদ্যোগও ভেস্তে যায়।

শহীদ রেজাউন্নবীর ভাতিজা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, শুরুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা সংগঠন দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেও এখন সে সংখ্যা কমে গেছে। তাই প্রতিবছর পারিবারিকভাবেই এই চার শহীদকে স্মরণ করা হয়।

শহীদ সেলিম চৌধুরীর ভাতিজা বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় নাটোরের এই চার শহীদই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতেন। অথচ শহীদ হবার পর তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই জোটেনি। এমনকি জেলা প্রশাসনও তাদের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান না এই চার শহীদকে।

শহীদ রঞ্জুর ভাতিজা খালিদ বিন জালাল বাচ্চু বলেন, চার শহীদের হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর এক দশকেরও কোন অগ্রগতি নেই। তাদের হত্যাকান্ডকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে বিচার করবে সরকার এমনটা প্রত্যাশা করছি।

শহীদ বাবুলের ছোট বোন রোকসানা পারভীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এই চার শহীদের মধ্যে রেজা,রঞ্জু ও সেলিম শহীদের মর্যাদা পেলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও অপর শহীদ বাবুলকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়নি। এমনকি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তার পরিবার বঞ্চিত।

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জানান, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এই চার শহীদের কবরস্থান এলাকায় অত্যাধুনিক স্মৃতি সৌধ নির্মানের উদ্যোগ নেন। কিন্তু শহীদ পরিবারের বিরোধীতার কারনে তা ভেস্তে যায়। তবে তিনি এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহীদ বাবুল শহীদের মর্যাদা না পাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে বলেন মেয়র। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এদিকে দিনটির স্মরণে শহরের কানইখালীস্থ চার শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায় জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এ সময় অনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মর্তুজা আলী বাবলু, ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু প্রমুখ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *