নাটোরে এক ভবনে ‘দুই ফাউন্ডেশন’ কার্যাদেশ; নির্মাণকাজ বন্ধ

নাটোরঃ নির্মাণ কার্যাদেশে (সিডিউল)বিভ্রান্তির জেরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমেদপুরের কামারদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। একই ভবনে দুই ধরণের ফাউন্ডেশন নির্মাণ কার্যাদেশ থাকায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ঠিকাদার। কার্যাদেশ অনুসারে দুইতলা ভবনের প্রতি তলার জন্য দুই ধরণের কার্যাদেশ মেনে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখতে গেলে বাধা দেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসী। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করা হলেও কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মাণ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন। ফলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ মে বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ সম্প্রসারণ কাজের জন্য মূল ভবনের পাশে নতুন দ্বি-তল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বড়াইগ্রামের বাস্তবায়নে এ কাজের ব্যয় ধরা হয় ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। অনুমোদিত নকশাসহ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেয়া চুড়ান্ত কার্যাদেশ বইয়ের শুরুতে একবার দ্বিতল ভবনের জন্য চারতলা ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা এবং মাঝামাঝিতে দ্বিতল ভবনের জন্য দুইতলা ফাউন্ডেশন করার কথা উল্লেখ আছে। ফলে চারতলা ফাউন্ডেশনের প্রাক্কলন অনুযায়ী সি-১ কলামে ১৬টি ২০মিলি রড, সি-২ কলামে ১৪টি ২০মিলি রড এবং সি-৩ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও দুইতলা ফাউন্ডেশনের সূত্র ধরে ব্যবহার হচ্ছে সি-১ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড, সি-২ কলামে ১০টি ২০মিলি রড ও সি-৩ কলামে ৮টি ২০মিলি রড। পাশাপাশি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমান ও ব্যবহার অনুপযোগী ইট।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থানীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মূল কার্যাদেশ (পত্রিকায় প্রকাশিত) গোপন রেখে চুড়ান্ত কার্যাদেশ বইতে চারতলা ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা পরিবর্তন করেছেন। বিদ্যমান কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকলে অন্তত ২০ লাখ টাকা ব্যয় কম হবে। অথচ মূল কার্যাদেশে দ্বি-তল ভবনের জন্য দুইতলা ফাউন্ডেশনের কোন নির্দেশনা নেই বলে দাবী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, ‘একই কার্যাদেশে দুই রকম ফাউন্ডেশন প্রস্তাবনা আমাদের বিস্মিত করেছে। অভিযোগ করলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ২৪ আগষ্ট এলাকাবাসী ওই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খাতুন বলেন, ‘কার্যাদেশ বিষয়ে প্রকৌশলীর সুরেই কথা বলেন ঠিকাদার। তাছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রড পরিমাণে কম। নিম্নমানেট ইটসহ অনান্য উপকরণের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় নি। বিদ্যালয় ভবনের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনা নির্মাণে এতোবড় অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। আমাদের কাছে মূল কার্যাদেশের কপি রয়েছে যা দিয়ে প্রমাণিত হবে নির্মাণপূর্ব চুড়ান্ত কার্যাদেশ বই পরিবর্তন করা হয়েছে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শ্যামল কুমার অনিয়মের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করে জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন। নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বড়াইগ্রাম উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন কার্যাদেশ বিভ্রান্তির কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, অভিযোগ পেয়ে তিনি স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। ত্রুটিপূর্ণ এ কার্যাদেশ অনুযায়ী ভবন নির্মিত হলে তা ঝুঁকিপুর্ণ হবে।

নাটোর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুবাস সাহা জানান, একই কার্যাদেশে দুই ধরনের নির্দেশনা দেখে তিনি নিজেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। পুরো বিষয়টি অবহিতকরণের মাধ্যমে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *