নাটোরে অতিরিক্ত সেচমূল্য আদায়ে ক্ষুদ্ধ কৃষকরা, বিক্ষোভ

নাটোর অফিস: 
নাটোরের সিংড়ায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে গভীর ও অগভীর নলকুপের অতিরিক্ত সেচমুল্য আদায় করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে সেচকাজ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।

সোমবার সকালে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ২ নং ডাহিয়া ইউনিয়নের বড়গাঁও ও রঘুকদমা গ্রামের মাঠে কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন সমাবেশ করে। এতে অংশ নেন বড়গাঁও, রঘু কদমা, হাতিয়ান দিঘী, ছাতুয়া, মষিগারী, তাড়াই, বড়ই চড়া সহ ৭ গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক ভুক্তভোগী কৃষক।

কৃষকদের অভিযোগ, সিংড়া উপজেলার বরেন্দ্র বহুমুখীর আওতাধীন ৭ গ্রামের মাঠ জুড়ে প্রায় ২শত একর জমিতে ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন র্কতৃপক্ষ তাঁেদর আওতাধীন গভীর নলকূপের সেচমূুল্য প্রতি ঘন্টায় ১২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। পুরো মৌসুম প্রতি বিঘা জমির সেচমুল্য নির্ধারণ হয়েছে ১হাজার ৫০০ টাকা। অথচ বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের তত্বাবধানে থাকা মালিক পক্ষের অপারেটররা তা মানছেন না। তাঁরা এই তথ্য গোপন করে কৃষকদের কাছ থেকে ২ হাজার ৮০০ শত থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত সেচমুল্য আদায় করছেন। অর্থাৎ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘায় ১৩০০টাকা থেকে ১৫০০টাকা অতিরিক্ত সেচমুল্য নেওয়া হচ্ছে।

রঘু কদমা গ্রামের কৃষক মুনছুর আলী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেখানে সেচমুল্য ১২৫০ টাকা আদায় করছে কিন্তু আমাদের এখানে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করায় আমরা চলতি মৌসুমের শুরুতেই আর্থিক ভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছি।

বড়গাঁও গ্রামের কৃষক মালেক সরকার বলেন,‘মটর ও ডিজেল চালিত নলকুপের চেয়ে গভীর নলকুপে স্বল্প খরচ পাবো এই আশায় আমরা এর আওতায় এসেছি কিন্তুু এখন দেখছি মটর ও ডিজেল চালিত নলকুপের চেয়েও পানি সেচের খরচ বেশি হচ্ছে।

হাতিয়ান দিঘী গ্রামের কৃষক জুয়েল রানা বলেন, ৩টি গভীর নলকূপের মালিক পক্ষের অপারেটর মতিন সরকার, শহিদুল ও হাশেমকে সেচমূল্য কমানোর কথা বললে তাঁরা কৃষকদের উপর ক্ষেপে যান এবং জমিতে পানি সেচ বন্দের হুমকি দেন। এমতাবস্থায় আমরা সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একাটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের কোন ফল না পেয়ে আমরা দাবি আদায়ে সেচকাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়ান দিঘী মাঠের গভীর নলকূপের অপারেটর শহিদুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সেচমূল্য নিলে আমাদের কোন লাভ থাকেনা। কৃষকদের কাছ থেকে ২৬০০,২৮০০টাকা চাইলেও তারা ২৫০০ টাকার বেশি দেয় না।

রঘু কদমা মাঠের অপারেটর মতিন সরকার ও হাশেম আলী একই মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদের এই মাঠের জমি গুলোতে পানি টানে বেশি তাছাড়া আগের চেয়ে বিদ্যুত খরচও বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা এই টাকা নিচ্ছি।’

সিংড়া উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল আলম বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় উপজেলায় মোট ৭৪টি গভীর নলকুপ আছে। এলাকার জমি ভেদে সেচ মুল্য নির্ধারণ করা হয়। উপজেলার চামারী ও খাজুরা ইউনিয়ন ব্যতীত ডাহিয়া, ইটালী সহ ১০টি ইউনিয়নের মাঠের জমির সেচমূল্য মৌসুমে প্রতি বিঘা ১৫০০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, সেচে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। নির্ধারিত সেচমুল্যের চেয়ে কেউ বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *