নাটোরে হরিণের মৃত্যুতে জেলা প্রশাসনের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি!

নাটোর অফিস॥ আদর করে নাম রাখা হয়েছিল শুক্লা। জন্ম হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে। জন্মের পরই মা শ্যামা ও বাবা শ্যাম আনন্দে ছোটাছুটি করেছে।
শুক্লার জন্ম হয়েছিল ইতিহাসখ্যাত নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির হরিণশালায়, যা বর্তমানের উত্তরা গণভবনে।
মঙ্গলবার ভোর রাতে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর রাজপাসাদ ও কারুকার্যময় অভ্যন্তরভাগ,প্রাসাদ বেষ্টনকারী মনোরম লেক, সুদৃশ্য বাগান, শ্বেত পাথরের তৈরি নান্দনিক ভাস্কর্য ও শোভাবদ্ধনকারী বিভিন্ন গাছগাছালিতে ভরপুর ইতিহাসখ্যাত এক সময়ের নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি এবং বর্তমানের উত্তরা গণভবনের মিনি চিড়িয়াখানায় এই হরিণ শাবকের জন্ম হয়। তার ভূমিষ্ট হওয়ার খবরে ছুটে এসেছিলেন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহরিয়াজ সহ জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তারা শুক্লাকে কোলে নিয়ে আদরও করেছিলেন।
জেলা প্রশাসক শাহ রিয়াজ নবজাতক হরিণ শাবক শুক্লার পরিচর্যায় যেন কোন ঘাটতি না হয় সেদিকটায় নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হরিণমালায় কর্মরতদের। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়। সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সেলিম উদ্দিন পরামর্শ দিয়েছিলেন হরিণ শাবককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর। সেই সাথে ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি। বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব না হলে ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে পরামর্শ দিয়ে যান।
কিন্তু এতসবের পরও বাঁচানো যায়নি হরিণ শাবক শুক্লাকে। বৃহস্পতিবার সকালে শুক্লা মারা যায়। স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, হরিন শাবকটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর অনেকেই তাকে নিয়ে অতিরিক্ত টানা হেঁচড়া করেন।
এদিকে হরিণ শাবক শুক্লার মৃত্যুর খবর পেয়ে গণভবনে যান জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ। জন্মের মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যুর কারন জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) ড. রাজ্জাকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই কমিটির অপর দুই সদস্যের একজন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা এবং একজন সহকারী কমিশনার। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড.সেলিম উদ্দিন মৃত শুক্লার ময়না তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন জেলা প্রশাসনে। মৃত্যুর কারন হিসেবে জন্মের পর শাবকটিকে দুধ খাওয়াতে না পারা ও ঠান্ডাজনিত কারনে শুক্লার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ড.বেলাল উদ্দিন বলেন, যে হরিণ শালায় শাবকটি জন্ম হয়েছে। তা যথেষ্ট উপযুক্ত নয়। এছাড়া প্রজননের সময় আলাদা এবং উষ্ণ ও উপযুক্ত জায়গা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জন্মের পর শাবককে যেভাবেই হোক খাওয়ানোর জন্য বলা হয়। এছাড়া উষ্ণ ও আলাদা জায়গায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। মূলত খেতে না পারা এবং ঠান্ডাজনিত কারনে জন্মের প্রায় ৩০ ঘন্টা পর শাবকটি মারা যায়।
জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন,শাবকটি জন্মের পর তারা বেশ আনন্দ পেয়েছিলেন। পরিচর্যায় কোন ধরনের গাফিলতি না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখার জন্য কর্তব্যরতদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। শাবকটি দুধ খাচ্ছিলনা বা খেতে পারছিলনা তা তাকে টাইম টু টাইম জানানো হচ্ছিল। সে কারনে তিনি প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের তলব করেছিলেন। তাদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী শাবকটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয় বলে তাকে জানানো হয়। কিন্তু শাবটি খাচ্ছিলনা তা তাকে বারবার জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার তার মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানানো হয়। আগামীতে যেন আর না হয় সে জন্য সকলের পরামর্শ সহ সহযোগীতা চান তিনি।
উত্তরা গণভবনে অচিরেই আরো একটি হরিণ শাবকের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ টিম এনে পরিচর্যা করা হবে। এছাড়া কিভাবে তাদের পরিচর্যা করা যায় সেজন্য সকলের পরামর্শ ও উপদেশ চেয়েছেন তিনি। আর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *