নাটোরে মহাসড়কে ৩ হাট, যান চলাচলে ভোগান্তি।

আশরাফুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নাটোর-পাবনা মহাসড়কজুড়ের তিনটি স্থানে সপ্তাহে ৪দিন বসে হাট। নির্দিষ্ট সীমা লংঘন করে বনপাড়া, আহম্মেদপুর ও রাজাপুর হাট মহাসড়কজুড়ে বসায় দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এ ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না কিছুতেই। এ কারনে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। যানজটে অপচয় হচ্ছে মূল্যবান সময়ের। মাঝে মাঝে দায়সারা অভিযানে নামে সংশ্লিষ্টরা কিন্তু নিমিষেই ফুরিয়ে যায় তার ফলাফল। হাট সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগই কাজে আসছে না।
জানা যায়, পৌরসভার পক্ষ থেকে বনপাড়া হাট প্রায় ৫০ লাখ টাকায় ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আহম্মেদপুর হাট প্রায় ১৪ লাখ এবং রাজাপুর হাট ১০ লাখ টাকায় প্রতিবছর ইজারা দেওয়া হয়।
উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার বনপাড়া হাট বসে শনি ও মঙ্গলবার। এই হাটের কালিকাপুর নতুন বাজার এলাকায় হাটের সীমা ছেড়ে মহাসড়ক ঘিরে বসে কাঁচা সবজি, রসুন, পিয়াজ আর পাটের হাট। জোয়াড়ী ইউনিয়নের আহম্মেদপুর হাট বসে সোম ও বৃহস্পতিবার। এই হাটের সীমা ছেড়ে মহাসড়ক ঘিরে বসে কাঁচা সবজি, রসুন, পিয়াজ, পাট আর আমের মৌসুমে আমের মোকাম। রাজাপুর হাট বসে প্রতি বৃহস্পতিবার। এই হাটেও সীমা লংঘন করে মহাসড়ক ঘিরে বসে উপজেলার বৃহৎ মাছের আড়ৎ, এছাড়া কাঁচা সবজি, পিয়াজ, রসুন, পাট তো আছেই।
প্রতি হাটবারে ওই তিন হাট এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ পারাপারে সময় লাগে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুন বেশি। হাট গুলোতে মহাসড়কজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহুত ট্রাক, নসিমন, করিমন, ট্রাকটর, ভ্যান গোটা অংশ দখল করে থাকে। হাটবারে শিক্ষার্থীরা চলাচলে বিপাকে পরে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যানজটপূর্ণ সড়কে হাটতে পারেনা। আবার চালক শ্রমিকদের দ্বারা ছাত্রীরা নানাভাবে নাজেহাল হয় ।
ভোগান্তির স্বীকার একাধিক মানুষ জানায়, তিনটি হাটের কারনে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন তারা। কোন ভাবেই এর স্থায়ী কোন প্রতিকার হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে ইউএনও, সড়ক ও জনপথ এবং হাইওয়ে পুলিশ অভিযানে নামে কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এক হাট পরেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। তাই মহাসড় দখল করে বিঘœ সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তথা এই বিড়ম্বনার স্থায়ী সমাধন চান সাধারণ মানুষ।
বনপাড়া হাট সম্পর্কে পৌরসভার সচিব রেজাউল করিম বলেন, ব্যবসায়ীদের কঠোর ভাবে নিষেধ করা সত্বেও তারা সীমা লংঘন করে। আবার হাটের জায়গাও সীমিত। তবুও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাজাপুর হাট সম্পর্কে গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এ ভোগান্তির অবসান ঘটানো হবে। তিনি বলেন, মাছের আড়তের জন্য মহাসড়ক ছেড়ে নতুন স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চান্দাই সড়ক এবং অর্জুনপুর সড়ককের মোড় ঘিরে সৃষ্ট যানজটের অবসান করতে মোড় দু’টির পাশে প্রসস্ত জায়গা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সড়ক ও জনপথ বাজার অংশে প্রশস্ত করে সড়ক নির্মাণ করলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। এরপরও মহাসড়ক উন্মুক্ত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আহম্মেদপুর হাট সম্পর্কে জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ বলেন, হাট বারে একটু-আধটু সমস্যা হতেই পারে। এলাকার স্বার্থে এটুকু সহ্য করতেই হয়।
সড়ক ও জনপথ নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে হাট এলাকা গুলোতে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা জিএম শামসুন নুর বলেন, আমাদের অভিযান চলমান আছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে ম্যাজিষ্টেট দিয়ে ঘন ঘন অভিযান চালালে বেশি সুফল পাওয়া যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বলেন, ওই তিন হাট এলাকায় মাঝে মাঝেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। সড়ক যানজট মুক্ত রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট ইজারাদারদের চিঠি দিয়ে শর্তক করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে অপারগ হলে ইজারা বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *