নাটোরে পড়ালেখায় প্রতিবন্ধি মহিবুলের আগ্রহে আপ্লুত সবাই

আল আফতাব খান সুইট, বাগাতিপাড়া
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নওশেরা মহল্লার কামরুল আহসান খান ও ফাইমা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান মহিবুল হোসেন খান(১১)। জন্ম থেকেই সে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোমল মনে জেকে বসে বই পড়ার ঝোঁক। বইয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকে মা-বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করান তাকে। বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে থাকে মহিবুল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ডিআরভুক্তি(প্রতিবন্ধী নিবন্ধন)না করায় চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার পরও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায়(পিইসি) অংশ নিতে পারেনি সে।

রোববার(১৭ই নভেম্বর)মহিবুলের সহপাঠীরা যখন একে একে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকছিলো তখন কেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থী বেশে বাবার সাথে আড়াই ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলো মহিবুল। একজন প্রতিবন্ধী শিশুর পড়াশোনার প্রতি এমন দুনির্বার আকর্ষণ দেখে আপ্লুত হন উপস্থিত অনেক অভিভাবক। আজ সোমবারও একইভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে বাবার সাথে দাঁড়িয়েছিলো সে।

জানা যায়, মহিবুল স্থানীয় এমদাদ খান ও ছেতেরা খান অর্কা কৃষি ও কারিগরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠা মহিবুল অন্য শিশুদের মতো বুদ্ধিতে স্বাভাবিক নয়। তা সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি এক অন্যরকম আকর্ষণ ছিল মহিবুলের। তাই তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা কামরুল আহসান খান। এভাবেই কোনোমতে পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠে মহিবুল। কিন্তু সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না ভেবে তাকে এ বছর ডিআরভুক্ত করতে আগ্রহী হয়নি তার পরিবার। কিন্তু মাহিবুলকে বোঝানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার নিজ স্কুলের পিইসি পরিক্ষার্থীদের সাথে মহিবুলও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা পেড়াবাড়ীয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সহপাঠীদের সাথে তাই সে ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে চায়। এ কারনে রোববার প্রথম পরীক্ষার দিন অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য স্কুল ড্রেস পরে প্রস্তুত হয় মহিবুল। ছেলের প্রবল জেদের কাছে হার মেনে বাবা তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনেন। পরীক্ষার্থী নয় বলে সে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই কেন্দ্রের মূল ফটকের গ্রীল ধরে সে দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে আড়াই ঘন্টা।

মহিবুলের বাবা কামরুল আহসান খান আপ্লুতকণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও পড়ালেখা করতে চায়। আর দশজনের মতো স্বাভাবিক শিশু হলে সে অনেক ভালো ফলাফল করতো। পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ বেশি। আগামীতে ডিআরভুক্ত করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করানো হবে।

এ ব্যাপারে বাড়াতিপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মজনু মিয়া বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা আছে যা মহিবুলের অভিভাবকরা হয়তো জানতেন না। তাছাড়া মহিবুলের স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি তাকে অবহিত করেনি। মহিবুলের অভিভাবকের সাথে কথা বলে আগামী বছর তার পরীক্ষা যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *