নাটোরে শিক্ষিকার মাদক ব্যবসায়ে ক্ষোভ,এলাকাবাসীর ঝাঁড়ু মিছিল

নাটোরে: আবারও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর এলাকাবাসী। ক্ষোভের কারণ, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মুন্নী পারভীন জামিনে মুক্ত হয়েছেন সম্প্রতি। একজন শিক্ষিকার গ্রেফতারের ঘটনায় স্বস্তি আর মুক্তিতে ক্ষোভের নেপথ্যে মাদক ব্যবসায়।
রোববার বিকেলে হাটগোবিন্দপুরের অদূরে চাঁদপুর বাজার এলাকায় মুন্নী পারভীনের শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও ঝাঁড়ু মিছিল করেছে এলাকাবাসী। মিছিল শেষে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মুন্নী পারভীন শিক্ষকতার আবরণে কয়েকবছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা মাদক ব্যবসা। এলাকায় মুন্নীর শেকড় এতটাই শক্ত যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও প্রমাণের অভাবে তাকে এতদিন ধরতে পারেনি। মুন্নী পারভীন এলাকায় মাদক রাজত্ব চালিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র যখন মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে, তখন মুন্নীর মতো একজন মাদক সম্রাজ্ঞী খুঁটির জোরে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। মাসখানেক আগে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ মুন্নী পুলিশের হাতে আটক হলে এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে সে আবারো মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। জামিন পেয়েই মুন্নী তার মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে অবস্থান একাট্টা পুরো এলাকাবাসী। শনিবার নাটোর শহরের একটি বিলাসবহুল রেস্তরায় রাজসিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন শিক্ষক মুন্নী পারভীন।
এদিকে, তার এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা। একজন প্রাথমিক বিদ্যঅলয়েল শিক্ষকের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের মত গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে তার নিজ এলাকায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুন্নী পারভীন গত কয়েক বছর ধরে মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। ২০১৪ সালে হাটগোবিন্দপুর এলাকায় একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন মুন্নী পারভীন। তবে শেষ পর্যন্ত খুঁটির জোরে চার্জশীটে আসেনি তার নাম। এছাড়া তার স্বামী আমির হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ঘর পোড়ানো, শিশু অপহরণ ও মাদক মামলাসহ বাগাতিপাড়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৭ই ডিসেম্বর রাতে নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক বস্তা গাঁজাসহ উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের চন্দ্রখৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মুন্নী পারভিনকে (৩১)স্বামী আমির হোসেন (৩৫) ও মা নাসিমা বেগম (৫০) সহ আটক করে বাগাতিপাড়া থানা পুলিশ। পুলিশের কাছে দীর্ঘদিন ধরে তথ্য ছিল, ওই বাড়িতে বিপুল পরিমাণে গাঁজা মজুদ রয়েছে এবং সেখান থেকে পাশ্ববর্তী রাজশাহীর দুইটি উপজেলায় সেগুলো নিয়মিত বিক্রি করা হয়। ওইদিন বিকেলে গাঁজা মজুদের বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। সন্ধ্যার পর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আটককৃতরা বাড়ির সকল দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে গ্রামবাসীদের ডাকতে শুরু করে। পরে গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ সহ মুন্নীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। প্রায় তিন ঘন্টা অভিযান চালিয়ে তাদের শোবার ঘরের মধ্যে খাটের নিচে বস্তায় রাখা এবং বাথরুম সহ বিভিন্নস্থানে রাখা প্রায় এক বস্তা পরিমান গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া গাঁজার পরিমান প্রায় সাড়ে ৮ কেজি। ওই রাতেই বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আটক ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। ২০ শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এরশাদ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে মুন্নী পারভীনকে আটকের দিন থেকেই বরখাস্ত করা হয়। ওই মামলায় ৩দিন কারাগারে থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন মুন্নী পারভীন।
অনান্য মাদক উদ্ধার অভিযানগুলোর মতো এই অভিযান ছিলনা বলে জানিয়েছেন সেদিন মাদক উদ্ধারে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরা। একজন শিক্ষিকার বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অনুমতির নিতে হয়েছিল জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে, যা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। আটকের পর মুন্নী পারভীনকে ছেড়ে দিতে অনেক হোমড়া-চোমড়া ব্যক্তিরা থানার অফিসার ইনচার্জকে চাপ দিলেও কারো অনুরোধ রাখেননি তিনি।
দয়ারামপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মুন্নী পারভীন এরাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। গত মাসে মুন্নী বিপুল পরিমাণে মাদক সহ আটক হওয়ার পরও জামিনে মুক্ত হয়ে আবার মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বলেন, মুন্নী পারভীন এলাকায় অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তার শাস্তির দাবীতে মানুষ এখন রাস্তায় নেমেছে। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে হত্যঅর অভিযোগ ওঠে। অর্থের জোরে বারবার সে পার পেয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসা না করলে এতো টাকার মালিক হওয়া যায়না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মিঠু বলেন, মুন্নী পারভীনের কারণে এলাকা ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা বারবার মুন্নীর মাদক ব্যবসায় নিয়ে অবহিত করেছি। তারা মুন্নীকে আটক করলেও অদৃশ্য শক্তির জোরে সে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। নতুন করে মাদক রাজত্ব বিস্তার শুরু করেছে এলাকায়। আমরা বিব্রত একজন শিক্ষিকার এমন মাদক ব্যবসায়ের জন্য।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মুন্নী পারভীন দাবী করেন, তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে এলাকার কিছু মানুষ জোট বেঁধেছে।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম জানান, মুন্নী পারভীনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা চলছে। তিনি জামিনে বেরিয়েছেন বলে শুনেছি। এ নিয়ে এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *