লালপুরের আসমানিদের পাশে দাঁড়ালো প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশন

নাটোর অফিস ॥
“আসমানিদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও
রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি
রসুলপুরে যাও
বাড়িতো নয় পাখির বাসা
ভেন্না পাতার ছানি
একটুখানি বৃষ্টি হলেই
গড়িয়ে পড়ে পানি”
একটুখানি হাওয়া দিলেই
ঘর নড়বড় করে
তারি তলে আসমানিরা
থাকে বছর ভরে”
পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের এই কবিতার আসমানিদের কথা অনেকের জানা। তাঁর সেই কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে আসমানিদের মানবেতর জীবনের কথা। পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের কবিতার মত নাটোরের লালপুরে পাওয়া গেছে তেমনই দুই আসমানিকে। এই দুই জন সম্পর্কে মা ও মেয়ে এবং দুজনায় বিধবা। পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানিদের মত লালপুরের আসমানিদের মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। লালপুরের আসমানিরা মা ও মেয়ে। মা আমেনা বেগম ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। মেয়ে মনজুর বয়স এখন ৬০ বছর। বিধবা আমেনা বেগম বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়েছেন। মেয়ে মনজুর শরীরের শক্তিও কমে গেছে। মা ও মেয়ে দুজনের শরীরেই বার্ধক্যজনিত কারনে রোগ বাসা বেধেছে। এর পরও লালপুর উপজেলার উত্তর লালপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে মেয়ে মনজু প্রায় তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী মা আমেনাকে নিয়ে একটি জরাজীর্ন ছোট্ট কুড়ে ঘরে বসবাস করেন। ঠিক পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানি কবিতার মত। প্লাষ্টিক বোতল কুড়িয়ে ও ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে তাদের জীবন। শোবার জন্য ঘরে নেই কোন জন্য চৌকি। স্যাঁতস্যাঁতে কাদামাটিতে কুড়ানো পলিথিনের উপরে খেজুর পাতার পাটিতেই কাটে তাদের রাত। মুনজু সারা দিন ময়লা আবর্জনা থেকে প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে তা বিক্রি করে এবং ভিক্ষা করে তাদের সংসার চালান। মা আমেনা উঠে দাঁড়াতে পারেন না। সব কাজ মেয়ে মনজুকেই করতে হয়।
মুনজু বলেন, আসছে শীতে স্যাঁতস্যাঁতে কাদামাটিতে কিভাবে থাকবে তার শয্যাশায়ী মা আমেনা তা নিযেই আমি চিন্তিত। একটু মাথা গোঁজার ঠাইঁয়ের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বার সহ অনেকের কাছে ঘুরেছি, সবাই আম্বাস দেয়,কিন্তু কিছুই মেলেনা। আমাদের জীবন কাহিনী শুনে প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশন তাদের মা-মেয়ের পাশে দাড়িয়েছে। সেজন্য তাদের কাছে আমরা মা-মেয়ে চির কৃতজ্ঞ।
লালপুরের সেই আসমানিদের এই মানবেতর জীবন কাহিনী সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের সহায়তায় পাশে এসে দাঁড়ায় লালপুর পাবলিক লাইব্রেরী ও প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশন। গত ১ নভেম্বর লালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর নজরে আসেন ওই মা-মেয়ে। পাবলিক লাইব্রেরীর মাধ্যমে তাদের অসহায় জীবন কাহিনী জানতে পারেন প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ। মা-মেয়ের মানবেতর জীবন কাহিনী জানার পর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় সংগঠনটি। বিধবা মা ও মেয়ের জন্য ঘর নির্মানের উদ্দোগ নেয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সিদ্ধান্ত গ্রহনের পর পরই মা ও মেয়ের জন্য শুরু করা হয় ঘর নির্মান কাজ। লালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর তত্বাবধানে এবং প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ঘর নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। ঘর নির্মাণ কাজের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও লালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, পাবলিক লাইব্রেরীর সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ, ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক হাসিবুল ইসলাম, পরিচালক প্রভাষক আমজাদ হোসেন, লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক খাজা শামীম মোঃ ইলিয়াস হোসেন, সদস্য গোলাম কিবরিয়া, পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ প্রমূখ।
প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও লালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ জানান, লালপুরে পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় বিধবা মা মেয়ের জন্য ঘর নির্মান করে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *