বাবার হাতে মা খুন- শিশু মৌমিতা ও মহিমার এখন ভবিষ্যত কি?

নাটোর অফিস ॥
মৌমিতা এখন ৮ম শ্রেণীতে এবং তার ছোট বোন মহিমা ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে। নাটোটোরের তেবাড়িয়া ইউনিয়নেরনারায়নপুর গ্রামে ওদের বাড়ি। একটি ছনের তৈরি ঘরে তাদের বসবাস। মা দিন মজুরি করলেও বেশ আনন্দেই কাটছিল তাদের জীবন। কিন্তু বাবার রক্তচক্ষু ও সন্ত্রাসী আচরন তাদের সেই সুখের দিন নিমিষেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সোমবার রাতে বাবা তার মাকে পশু হত্যার মত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে রেখে যায়। তার মায়ের মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের ভবিষ্যত হয়ে উঠেছে অমানিষার কালো রাতের মত। এখন তাদের ভরণ পোষন বা লেখাপড়ার খরচ মেটাবে কে? লেখা পড়া হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু খাবার জুটবে কোথায় থেকে। মা জীবিত থাকাকালীন এক বেলা হলেও খাবার জুটেছে। শত কষ্ট হলেও তাদের দুই বোনের আবদার মিটিয়েছেন প্রয়াত মা আনোয়ারা বেগম শিল্পি। পাষান্ড বাবা মঈনুল হোসেন মনির সোমবার রাতে মাকে ঘরের বাহিরে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর তারা এখন এতিম। এখন ওদের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যত।
মৌমিতা জানায়, তার বাবা একজন ভবঘুরে প্রকৃতির। প্রায় সময়ই বেকার থাকেন। বাড়িতে থাকেন না। বলেন ঢাকাতে কাজ করেন। মাঝে মধ্যেই কোথায় থেকে এসে মায়ের সাথে ঝগড়া ঝাটি বাধিয়ে বসেন। সোমবার রাতে ঘটনার কদিন আগে তার বাবা বাড়িতে আসেন। ঘটনার রাতে আমি পাশেই নানার বাড়িতে ছিলাম। রাতে গ্রামে মানুষের কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শুনতে পাই বাবা মাকে মেরেছে। তবে মাকে যে বাবা মেরে ফেলেছে তা জেনেছি সকালে। মায়ের মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওই রাতে মহিমা ছিল বাবা-মার কাছে।
মহিমা জানায়, রাতে বাবা তার মাকে ঘরের বাহিরে ডেকে নিয়ে যায় । এর পর আমার মায়ের গোঙ্গানী আর চিৎকার শুনতে পাই। বাবা যে মাকে মারছে তা বুঝতে পারছি। কিন্তু একদম মেরে ফেলবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। এখন আমাদের কি হবে কাকু? আমাদের বাঁচাবে কে-এমন আকুতি ছিল মহিমাদের। ওদের আকুতিভরা কথায় উপস্থিত সবার চোখে পানি এসে ছল ছল করছিল। এসময় প্রতিবেশীদের অনেকেই শংকা প্রকাশ করে বলেন সত্যিতো এখন ওদের দুই বোনের কি হবে?
প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান,ওরা এখন নানার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ওদের নানা বাহার আলী একজন রিক্সা চালক। বয়সের ভারে তিনিও শরীরের শক্তি হারাতে বসেছেন। দুই নাতনি হয়ত আধপেটা খাবার যোগান দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু তাদের লেখাপড়া ,কাপড়-চোপড় সহ আনুসাঙ্গিক বিষয় দেখবে কে? উপস্থিত অনেকেই এই দুই বোনের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান নিজেও ্ওই দুই শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বলেন, ওদের দুই বোনের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে পরিষদে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়া নাটোরে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল,জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ সহ হৃদয়বানদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন। তিনি ওই দুই শিশু কন্যার জন্য বিত্তবানদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন,তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ওই শিশুদের সাথে সাক্ষাত করা সহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *