নাটোরের সিংড়ায় সুলতান বাহিনীর হুমকিতে ২৫দিন ধরে ৭ পরিবার গ্রামছাড়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক॥ নাটোরের সিংড়া উপজেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে বিভিন্ন বাহিনীর অত্যাচারের খবর নতুন কিছু নয়। এসব এলাকাগুলোতে এক একটি বাহিনীর সদস্যরা এতটাই দাপটের সাথে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে যেন আইনও তাদের কাছে অসহায়বোধ করে। তেমনি এক বাহিনীর নাম সুলতান বাহিনী। সিংড়ার রামানন্দ খাজুরার ত্রাস এই সুলতান বাহিনী তোয়াক্কাই করে না এলাকার সাংসদ ও আইসটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশও।
আধিপত্যসহ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিপক্ষ বাবা সুলতান বাহিনীর হুমকির মুখে গত ২৫ দিন ধরে ৭ পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। গত ২৭ জুন সিংড়া উপজেলার দুর্গম রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আনিস, রইস, আমজাদ ,মামুন , ফারুক হোসেন ও শহিদুল ইসলাম নামে ৭ কৃষকের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে নিজেদের আস্তিত্ব জানান দেয় সুলতান বাহিনী। সুলতান বাহিনীর অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকির মুখে নির্যাতিত ওই ৭ পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে এখনও। পরবর্তীতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা করে দিলেও এখনও নিজ গ্রামে ফিরতে পারেনি ওই ৭ পরিবার।
ভুক্তভোগী ওই সব পরিবারের অভিযোগ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের দেওয়া আশ্বাসের পর নারী সদস্যরা গ্রামে ফিরে গেলে সুলতান বাহিনীর লোকজন আবারও বাড়ি ঘরে হামলা করে এবং নারী সদস্যদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। এত করে তারা গ্রাম ছেড়ে সিংড়ার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া। সুলতান বাহিনীর ভয়ে থানায় অভিযোগ করার সাহস পর্যন্ত পাচ্ছেনা ঘরছাড়া পরিবারগুলো। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সুষ্ঠ বিচার দাবী করেছেন।
নির্যাতিত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এনামুল , বাবা সুলতান ও তার ভাই ফেরদৌস আমার সুখের সংসার ভেঙে তছনছ করেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা বাড়িতে ঢুকে জিনিস পত্র ভাংচুর ও চাল, ডাল, টাকা-পয়সা সবই লুটপাট করে নিয়ে গেছে। শুধু জীবনটা নিয়ে পালিয়ে এসেছি। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কি আর বসত ভিটায় ফিরতে পারব না? কেউ কি নেই আমাদের একটু খবর নেয়ার?
নির্যাতিত কৃষক মামুন ও ফারুক হোসেন বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবা সুলতান বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলে না। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাদের হুমকির মুখে প্রায় একমাস ধরে গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছিনা ।
কৃষক আনোয়ার হোসেন, আয়েন উদ্দিন ও আমজাদ হোসেন বলেন, এতো হামলা ও নির্যাতন মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারপরও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের শালিসী সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখনও আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না। এটা খুবই দুঃখজনক।
কৃষক আনোয়ারের মেয়ে আংগুরি খাতুন কৈগ্রাম সবিরণ গুলজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে নাদিম মাহমুদ রামানন্দ খাজুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। তারা জানায়, হামলার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের স্কুলে যাওয়া। চলতি জুলাই মাসে তারা পরীক্ষাতেও অংশগ্রহন করতে পারেনি। তাদের শিক্ষাজীবন এখন অনিশ্চিত।
তবে এইসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেছেন বাবা সুলতান ও ফেরদৌসের চাচা জাকির হোসেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায় ওই ৭ পরিবার নিজেরাই দুর্বল। তাই লোক লজ্জার ভয়ে তারা গ্রামে থাকেনা। তাদের গ্রামে আসতে কেউ বাধা দিচ্ছেনা। গ্রামে আরো অনেক মানুষ বাস করে। সেই সব মানুষ এই গ্রামেই থাকে। মনের দুর্বলতা থাকায় তারা নিজেরাই গ্রামে আসছেনা। সালিশ বৈঠকে পক্ষপাতিত্ব হওয়ায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।
খাজুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, তারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করেছেন। সালিশে উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে একটি পক্ষ সালিশে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে আবারও সালিশ বৈঠকের আবেদন করেছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান দেশের বাহিরে থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখনও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবীর উদ্দিন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা খুব নিরীহ প্রকৃতির। তাদের প্রতিপক্ষরা খুবই প্রভাবশালী। তবুও এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজার রাখার স্বার্থে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। উভয় পক্ষই সহাবস্থানে বসবাসের অঙ্গিকার করে। কিন্তু এখন সালিশ মানছেনা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আইনগতভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনও সমঝোতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিংড়া থানার ওসি (তদন্ত) নিয়ামুল আলম বলেন,এবিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উভয় পক্ষের মধ্যস্থতায় বিরোধ মিটে যাওয়ার কথা। পরিবারগুলো গ্রামে ফিরতে পারেনি বা যায়নি সে বিষয়ে পুলিশকে কেউ জানাননি বা অভিযোগ করেনি । বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *