নাটোরের চলনবিলে মাছের আশংকাজনক বিলুপ্তি!

নাটোর: দেশের সর্ববৃহৎ চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরে এখনও ৭৯ প্রজাতীর মাছ পাওয়া গেলেও ইতোমধ্যেই বিলুপ্তপ্রায় ৩০,আর বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৪টি প্রজাতীর মাছ। তবে,বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো নতুনভাবে চাষ শুরু হলেও দেখা নেই বিলুপ্ত প্রজাতীর মাছ। মাছপ্রিয় নাটোরবাসী ফিরে পেতে চান,রসনাতিপ্ত,অত্যন্ত স্বাদযুক্ত সেই বিলুপ্ত প্রজাতীর মাছ ধোদা,বাইটক্যা,গুরপই আর গোজার মাছ।
নাটোর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়,চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরে এক সময় একশত প্রজাতীর ওপরে মাছ পাওয়া যেত। কালেক্রমে,নদীর পাড় দখল,বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা নির্মাণ,অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন,অধিক ফলনের আশায় জমিতে কীটনাষক ব্যবহার ইত্যাদীর কারণে পানির স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ফলে হাড়িয়ে যেতে থাকে বিভিন্ন দেশী প্রজাতীর স্বাদু পানির মাছ।
বর্তমানে নাটোরে ৭৯ প্রজাতীর মাছ পাওয়া যায়।
জেলা মৎস্য অফিসের মতে,বর্তমানে নাটোরে ৫০৯৯৬মেটন মাছ চাষ করা হচ্ছে।এর মধ্যে পুকুর-দীঘিতে চাষ হচ্ছে ৩৪৭৫৯মেটন,প্লাবন ভূমিতে ১৩০০মেটন আর হালতীসহ বিভিন্ন বিল থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১০৯০মেটন মাছ।
বর্তমানে ৪প্রজাতীর মাছ জেলার কোথাও পাওয়া যায় না,অপরদিকে ৩০ প্রজাতীর মাছ বিলুপ্তির পথে বলে দাবী করেছেন কর্তৃপক্ষ।নাটোর সদর উপজেলার মাদ্রাসা মোড় বাজারের মাছের আড়ৎদার ফারুক জানান,প্রায় দিনই তারা সিলভারকার্প,পাঙ্গাস ছাড়াও দেশীয় প্রজাতীর রুই,কাতলা,মৃগেল,কই,কানুছ,মাগুর ইত্যাদী মাছ স্থানীয় মাছচাষীদের কাছ থেকে কিনে পাইকারী বিক্রি করেন। তবে কিছু দেশীয় প্রজাতীর টেংড়াসহ বেশকিছু বিলের মাছ এখন পুকুরে চাষ করা হচ্ছে। এই মাছ ছাড়াও প্রতিদিনই তারা জেলেদের কাছ থেকে বিলের মাছ কেনেন। মূলত দেশী প্রজাতীর বিলের মাছের চাহিদা বেশী হওয়ায় এগুলোর দামও বেশী পাওয়া যায়।
শহরের নীচাবাজার এলাকার নিয়মিত মাছ বিক্রেতা,মাছুম জানান,বাজারে দেশী প্রজাতীর মাছের চাহিদাই বেশী। তবে এসব মাছ বেশী পাওয়া যায়না। দোকানে দেশী প্রজাতীর মাছ বিক্রি হওয়ার পরই কেবল কার্প বা অন্যান্য মাছ বিক্রি হয় বলে দাবী করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মাছুম জানান,বেশ কয়েক বছর থেকে তিনি ধোদা বাইটক্যা,গুরপই বা গোজার মাছ দেখেননি,বিক্রির তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে,ওগুলোই আসল স্বাদযুক্ত মাছ,তিনি নিজেও বিক্রির পাশাপাশি ওসব মাছ বাড়িতে নিয়মিত খেতেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাছুম জানান,ধোদামাছ কই মাছের চেয়ে একটু বড়,প্রায় আট-দশ ইঞ্চি লম্বা,গুরপই মাছ গুচি মাছের চেয়ে কিছুটা ছোট,গোজার মাছ শোল মাছের চেয়ে কিছুটা বড়,আর বাইটক্যা মাছও প্রায় কই মাছের চেয়ে বড়। প্রায় ৭-৮ বছর আগে তিনি ওই মাছগুলো বিক্রি করেছেন। ওই মাছগুলোর দেহে অনেক তেল থাকত আর স্বাদও অসাধারণ বলে দাবী করেন তিনি।
সদর উপজেলার ভাটোদঁাড়া গ্রাম প্রধান,আব্দল জলিল জানান,আগে প্রায় সারা বছরই বিলুপ্ত মাছগুলো পাওয়া যেত। বাড়ীর সামনের বিলে তারা দলবেধে বন্ধুদের সাথে অন্যান্য মাছের সাথে ধোদা,গিরপই,বাইটক্যা আর গোজার মাছ পানিতে ডুব দিয়ে হাত দিয়ে ধরতেন।আর বৃষ্টি শুরু হলে পুকুর আর বিলের কচুরির মধ্যে বড় বড় এসব মাছ পাওয়া যেত।
এখন মাছ খেলে কোনো স্বাদ পাওয়া যায়না উল্লেখ করে তিনি মাছের প্রকৃত স্বাদপেতে বিলুপ্ত মাছগুলো ফিরিয়ে আনার দাবী জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান,বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে,বিলুপ্ত হওয়া মাছগুলো জেলার বাইরে কোথাও পাওয়া গেলে তার প্রজাতী রক্ষা করা সম্ভব, নইলে নয়। এব্যাপারে মৎস্য বিভাগের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে দাবী করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *