নাটোরের সিংড়া পেয়েছে এক মানবিক মেয়র

নাটোর অফিসঃ

দেশে করোনা মহামারীর শুরু থেকে
নিজ পৌরসভার মানুষদের ঘরে রাখতে নিজে দিন-রাত এক করে খেটে চলেছেন নাটোরের সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে তাকে দেখা গেছে করোনা সংকটের আগেও। ২০১৭ সালের অকালবন্যায় বুক সমান পানি অতিক্রম করে পৌরবাসীর কাছে পৌছে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। আর করোনা সংকটের শুরু থেকে সিংড়াবাসীকে ঘরে রাখতে হাতজোড় করা থেকে শুরু করে পা চেপেও ধরতে দেখা গেছে তাকে। এরই মাঝে চলনবিলে বোরো ধান পাকা শুরু হলে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে একবেলা করে কাস্তে হাতে ধানও কাটছেন এই মেয়র। বৈশ্বিক এই দুর্যোগে নাটোর জেলার একজন মানবিক জনপ্রতিনিধি হিসেবে এভাবেই আত্নপ্রকাশ ঘটেছে মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের।

সম্প্রতি এই পৌর জনপ্রতিনিধি কিভাবে দিনযাপন করেন তা লক্ষ্য করেছে জাগোনাটোর।

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মেয়র ফেরদৌসের কাজ হলো দলীয় নেতাকর্মীদের ধান কাটার জন্য একত্রিত করা। রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকে একবেলা করে প্রান্তিক চাষীর ধান কাটেন মেয়র। দুপুরের পর অল্পসময়ের জন্য নিজ কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেন তিনি। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল, তেলসহ অনান্য সামগ্রী ক্রয়, তদারক ও ত্রাণের প্যাকেট প্রস্তত কার্যক্রম নিজে উপস্থিত থেকে তদারক করেন।

গত ২৯ এপ্রিল নাটোরের সিংড়া উপজেলায় প্রথম ৫ জন করোনা পজেটিভ রোগী ধরা পড়ে। পরের দিন লকডাউন ঘোষনা করে উপজেলা প্রশাসন।  লকডাউনের পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে পড়ে। সীমিত হয়ে পড়ে মানুষের জীবনযাত্রা। পৌর এলাকায় খাদ্যের অভাব যেনো কোনো ঘরে না থাকে সে লক্ষে মেয়র ফেরদৌস চালু করেন হটলাইন। মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা খাবার চাইতে পারে না, তাদের খাবার পৌছে দেয় হটলাইন সার্ভিস। দিনে যেসব কল আসে রাতে তাদের কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। এশা ও তারাবি নামাজ শেষে স্বেচ্ছাসেবক টিম নিয়ে মেয়র বাড়ি বাড়ি পৌছে দেন খাদ্য সামগ্রী। লকডাউনের পর চলো পরিবহনের মাধ্যমে পৌর এলাকার ১২১টি পরিবারকে মেয়র নিজে গিয়ে খাবার পৌছে দেন।

শুধু তাই নয়,  মহান মে দিবস উপলক্ষে চার শতাধিক কর্মহীন শ্রমিকের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি।

মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস জাগোনাটোরকে বলেন, ‘যেদিন থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজে মাঠে নেমেছি, সেদিন থেকে নিজ ঘরে প্রবেশ করিনি। বাড়ির নীচতলায় একটি কক্ষে কোয়ারেন্টিনে থাকার মতো করে বাস করছি। স্ত্রীকে বলেছি ঘরের দরজার কাছে খাবার রেখে দিতে। তার রেখে যাওয়া খাবার খেয়ে প্লেট-গ্লাস আবারও দরজার কাছে রেখে দিই। প্রতিদিন এক-দুবার নিচে থেকেই স্ত্রী-সন্তানদের দেখি। স্ত্রী-সন্তানদের সুস্থ ও নিরাপদে রাখার জন্য তাদের কাছে আসতে দেই না।’

ফেরদৌস আরও বলেন, ‘সিংড়ার সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে গরীব কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি। আগ্রহ নিয়েই তারা কাজ করছে। পৌর অডিটোরিয়ামে ত্রাণের কাজ করা হয়। আমাদের টেলি পরিবহন সার্ভিস ‘চলো’ দ্বারা পৌরবাসীর কাছে খাবার পৌছে দিচ্ছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ এভাবে আসে না। তবে সিংড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এমনকি বিদেশেরও অনেক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ এই দুর্যোগে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের অর্থ সহায়তা গ্রহণ করেই আমরা ত্রাণের খাদ্য কিনছি।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *