নাটোরে দুর্ধর্ষ লেডি কিলার বাবু শেখ গ্রেফতার

নাটোর অফিস॥
নাটোরে নারী ও শিশুসহ ৮ হত্যা মালার আসামী দুধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে নাটোর শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর বাবু শেককে গ্রেফতারের পর লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় জোড়া খুনের হত্যা মামলার তদন্তে উঠে আসে এই দুর্ধষ কিলার বাবু শেখের নানা খুনের কাহিনী। রোববার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়েনর মাদ্যমে বাবু শেখকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার পিপিএম বলেন, গত ৮ অক্টোবর রাতে নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় পরপর দুই নারীকে হত্যা করে নগদ টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায় একদল চোর। এ ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা দায়েরের পর মাঠে নামে পুলিশ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রথমে নাটোরের সিংড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় রুবেল আলীকে(২৩)। তার দেয়া তথ্যে নাটোর শহরের স্বর্ণকার লিটন খাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যে আসাদুল ইসলাম(৩৬)কে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় দুই হত্যার সাথে জড়িত বাবু শেখ ও রুবেল। শনিবার রাতে বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। বাবু পুলিশকে বলেছে, জেলের বেশ ধারণ করে সে এসব হত্যাকান্ড চালান। তিনি আরও বলেন,বাবু শেখ একজন দুর্ধষ সিরিয়াল কিলার। সে নাটোর, টাঙ্গাইল ও নওঁগায় ৭ নারীকে হত্যা করেছে। এসব হত্যা কান্ডের সময় ধর্ষণের সাথেও জড়িত সে। প্রত্যেককে সে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। জেলের (মৎস্য শিকারীর) বেশ ধারণ করে সে এসব হত্যাকান্ড চালিয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর সে নাটোরের ৬ নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। যে বাড়িতে পুরুষ সদস্য কম সেই বাড়ি টার্গেট করে হানা দিয়ে নারী সদস্যকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর টাকা ও স্বর্নালংকার হাতিয়ে নিত।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা পিপিএম বার বলেন, গ্রেফতারকৃত বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে কালু নওর্গাঁ জেলার রানীনগর থানার হরিশপুর গ্রামের মৃত জাহের আলীর ছেলে। বাবু শেখকে ধরার আগে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো সিংড়ার রুবেল আলী (২২) ও নাটোর শহরের লালবাজারের স্বর্ন ব্যবসায়ী লিটন খাঁ (৩০) ও স্টেশন বাজার এলাকার আাসাদুল (৩৬)। এই তিনজনের মধ্যে আসাদুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে কালুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর বাবু শেখের দেয়া স্বীকারোক্তির পর নাটোর, টাঙ্গাইল ও নওঁগার ৮ নারী হত্যা ও ধর্ষন ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়। সবকটি হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে সে। শুধু নগদ অর্থ ও স্বর্নালংকার রুটে নিতেই বেছে নেয়া হয় যে বাড়িতে পুরুষ সদস্য কম। নদী-নালা-খাল-বিল সংলগ্ন এসব বাড়িতে হানা দেওয়ার আগে জেলের(মৎস্য শিকারীর) বেশ ধরে রেকি করতো সে। পরে রাতে হানা দিয়ে শ্বাসরোধ করে নারী সদস্য হত্যা করে তার কাছে বা ঘরে মজুদ স্বর্নালংকার এবং নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়তো। ফলে ঘটনাটি চুরির বলেই ধারনা করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি অথাৎ গত ৮ অক্টোবর বড়াল নদীর দুপারের গ্রাম নাটোরের লালপুর উপজেলার চংধুপইল গ্রামে নারী আনসার সদস্য সাবিনা পারভিন ওরফে সাহেরা (৩২) কে হত্যা করে স্বর্নের চেইন,কানের দুল ,একটি টি মোবাইল ফোন এবং একই রাতে বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তিপুর গ্রামের রেহেনা বেগম(৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যা করে ১৬ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এঘটনায় সন্দেহভাজন রুবেল আলীকে গ্রেফতারের পর ৮ হত্যা মামলার রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই স্বর্ন ক্রেতা স্বনূব্যবসায়ী লিটন খাঁকে আটক করা হয়। এরপরে আটক আসাদুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় দুর্ধষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে।
ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার পিপিএম বলেন, দুধর্ষ কিলার বাবু শেখকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে ৮টি মামলার সব ক’টিতেই বিচার করা সম্ভব হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *