নাটোরে কোরবাণীতে চাহিদা সত্বেও নেই পর্যাপ্ত মহিষ

নাটোর: নাটোরে জেলায় অধিকাংশ মহিষ লালিত-পালিত হয় পদ্মার চর বিধৌত লালপুর উপজেলায়। মূলত কাঁচা ঘাসের সহজলভ্যতা বিবেচনায় স্থানীয় খামারীরা মহিষ লালন-পালন করেন। প্রতিবছর কোরবানীর মৌসুমে এখানকার মহিষগগুলো সমগ্র জেলার চাহিদা মেটাতে স্থানীয় হাটগুলোতে বিক্রি করা হয়। তবে এবার পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিজনিত সংকট ও রোগ প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক সহায়তা না পাওয়ায় কারণে খামারিরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কোরবানীর হাটগুলোতে। চাহিদা সত্বেও মিলছে না পর্যাপ্ত মহিষ।

কয়েক যুগ ধরে লালপুর উপজেলার কাজিপাড়া, ডেবরপাড়া, বিলমারিয়া, বুধপাড়া, চাঁদপুর, মাধবপুরসহ বেশ কয়েকটি চর সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক খামারি মহিষ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তবে বর্তমানে এসব খামারির সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গেছে। ফলে এ কোরবানী মৌসুমে চাহিদার মাত্র ২০ ভাই মহিষ মিলছে এসব এলাকা থেকে।

স্থানীয় খামারিদের মতে, গত কয়েক বছরের অকাল বন্যা ও চলতি মৌসুমে বেশ কিছুদিন টানা বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে পশুখাদ্যের সংকট দেখা দেয়। বিগত বছরগুলোতে বর্ষা ও বন্যার সময় বেশ কিছু মহিষ রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২০টি মহিষ মারা যায়। ফলে একদিকে বর্ষার পর পরই যেমনি খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়য়, তেমনি কমেও যায় মহিষের দাম। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। খামারিদের অভিযোগ, পশু চিকিৎসকরা পদ্মা চরের মধ্যে যেতে চান না। ফলে রোগে আক্রান্ত মহিষ সহজেই মারা যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।

উপজেলার তিলকপুর গ্রামের মহিষের বাথান মালিক জুয়েল ও কবির জানান, টানা কয়েক বছর তারা কোরবানীর আগে স্থানীয় হাটে মহিষ বিক্রি করেছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা আর বৃষ্টির কারণে চরে পতিত জমি থাকে না। ফলে মহিষের জন্য পর্যাপ্ত ঘাস পাওয়া যায় না। তাছাড়া অনান্যে খাদ্যের দামও চড়া। এসব কারণে মহিষ পালন কমছে।

কাজিপুরের মহিষ বাথান শ্রমিক আলী আক্কাস বলেন, ‘মহিষ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর পশু ডাক্তারদের ডাকা হলেও তারা চরে আসতে চান না। ফলে সময়মত চিকিৎসা না পেয়ে মহিষ মারা যায়। তাছাড়া কোরবানী ঈদ প্রায় বর্ষা মৌসুমে হওয়ায় বিক্রির সময় মহিষের দামও পড়ে যায়।’

ডেবরপাড়ার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক খাদ্য ছাড়া মহিষ পালন না করতে পারলে পুঁজি থাকে না। বিগত বছরগুলোতে কোরবানীর সময় ৪ থেকে ৫টি মহিষ বিক্রি করলেও এবার মাত্র একটি মহিষ বিক্রির জন্য রেখেছি।’

সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার ফেরিঘাট পশুর হাট, বড়াইগ্রামের আহমেদপুর ও মৌখাড়া মাদ্রাসা হাট, লালপুরের গোপালপুর হাট, গুরুদাসপুরের চাচকৈর হাট, নাটোরের তেবাড়িয়া পশুর হাটগগুলোতে গরুর তুলনায় মহিষের কম সরবরাহ লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকতা মোস্তাফিজুর রহমান মহিষ পালনে খামারিদের অনীহার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় গত প্রায় ১০ বছর ধরে ভ্যাটেরিনারী চিকিৎসক পদ সহ মাঠ কর্মীর ৪টি পদও শুন্য রয়েছে। ফলে পদ্মার চরে মহিষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পরও লোকবল না থাকায় সেখানে কাউকে পাঠাতে পারেননা। এসব কারণে মহিষ পালন কমতে পারে।’

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বেলাল হোসেন বলেন, জেলায় কোরবাণীর জন্য প্রায় ৪লাখ পশু হৃষ্টপু্ষ্টকরণ করা হয়েছে যা মোট চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। কোরবাণীতে মহিষের একটা আলাদা চাহিদা আছে। তবে মহিষ পালন কমলেও জেলায় কোরবানীর পশুর অভাব হবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *