নাটোরের ঐতিহািসক স্থাপনাগুলো ‌বাণিজ্যিক লোভ থেকে মুক্তি পাক

ইতিহাস-ঐতিহ্য-প্রকৃতি যথাযথ রক্ষা-সংরক্ষণ একটি জাতি-রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জরুরী। মানুষ তার আত্মপরিচয় অর্থাৎ অস্তিত্বরক্ষার জন্যে এসবের সুরক্ষা করে থাকে।

গত ৭ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক সমকাল ও জাগোনাটোর২৪ ডটকমে ‘গণভবনের ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন হতে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবনকে আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণীয় করার নামে ভেতর ও বাইরে নতুন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ৪৪ দশমিক ৩৯ একর আয়তনের এ গণভবনে থ্রিডি সিনেপ্লেক্স, মোটেল, শপিং সিনেপ্লেক্স, সুইমিংপুল, কালভার্ট ও পাথওয়ে নির্মাণসহ বোটিং ও পুকুরপাড় বাঁধাই করা হবে।

এ প্রসঙ্গে নাটোরের বাসিন্দা সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবীর জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুল জারি করেন। রুলে পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর নামে উত্তরা গণভবনের মূল নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্পের সাইন বোর্ড টাঙানো এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। অপর এক রুলে সংস্কারের নামে ঐতিহাসিক এ স্থাপনা ধ্বংস করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত বলা যায়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক প্রাচীন জনপদ হওয়া সত্বেও বর্তমানে নাটোর অর্থনৈতিক কর্মপরিধিতে একটি পিছিয়ে থাকা জনপদ। পর্যটন হতে শুরু করে এখানকার অনেক সম্ভাবনাকে আজও আমরা সফল করতে পারিনি। ফলে সরকারের যেকোন উন্নয়ন কর্ম-পরিকল্পনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে অবশ্যই না। পর্যটনকে আর্কষণ করে যেকোন পরিকল্পনা-স্থাপনা জেলা প্রশাসন গ্রহণ করতেই পারেন তবে সেটা আমাদের প্রাচীন স্থাপনাকে নষ্ট করে নয়। সেসব পরিকল্পনা নাটোরের যেকোন স্থানে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
আমরা লক্ষ্যকরি নাটোরের রাণীভবানী রাজ প্রাসাদকে পিকনিক চত্ত্বর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে সেখানে বড় বড় গাড়ি পার্কিংসহ রান্না-বান্না আমোদ-প্রমোদ করতে দেয়া হয়। তা কেন? আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে এসব করা, করতে অনুমতি প্রদান করা, অসভ্যতা নয় কি?
আমরা নাটোরকে ভালবাসি। নাটোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে আমরা গর্বিত হতে চাই। আনন্দিত হতে চাই।

আশাকরি নাটোরের মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, জেলাপ্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ প্রতিটি জনমানুষ আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের যেকোন স্থাপনা বাণিজ্যিক লোভে আক্রান্ত হোক তা চাইবেন না।

লেখক:
সাজেদুর রহমান সেলিম
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক প্রান্তজন

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *