নাটোরের কাদিরাবাদ ক্যান্টঃ স্কুলে ইটের আঘাতে ছাত্রের মৃত্যু

নাটোর: ইটের আঘাতে আহত নাটোরের কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। বার্ষিক ক্রীড়ায় গোলক নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ইটের ড্যামী গোলক বানিয়ে মঙ্গলবার স্কুল সময়ে অনুশীলন করার সময় আঘাত পায় সাজ্জাদ। ড্যামী গোলকের আঘাতে সে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সে মারা যায়। বুধবার দুপুরে তার নিজ গ্রামে জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক সদানন্দ সরকার জানান, বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের জন্য তিনি তার শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উচ্চতা মাফ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এসময় শুনতে পান একজন ছাত্র আহত হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীদের মারফত জেনেছেন, সকলের অজান্তে সাজ্জাদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী গোলক নিক্ষেপের অনুশীলন করছিল। তারা গোলকের ড্যামী হিসেবে ইট নিক্ষেপ করে অনুশীলন করছিল। শিক্ষকদের অজান্তে তারা মাঠের একটি ধারে এই অনুশীলন করছিল। এসময় একটি ইট সাজ্জাদের মাথায় এসে পড়লে সে আহত হয়। শিক্ষার্থী সহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাৎক্ষনিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছে তার সহপাঠিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্বজনরা। বুধবার সকালে স্কুলে এই হৃদয় বিদারক ঘটনার খবর পৌঁছার পরপরই শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শিক্ষকরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা ছুটে যান সাজ্জাদ হোসেনের নিজ গ্রাম বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের ছেলে। আব্দুল লতিফ স্কুল সংলগ্ন দয়ারাম বাজারে জুতার ব্যবসা করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে স্কুল চত্বরে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার জন্য তার মৃতদেহ আনা হলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শিক্ষকরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এসময় সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। জানাজায় কাদিরাবাদ সেনানিবাসের কমান্ডার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেন। স্কুল চত্বরের জানাজা নামাজ শেষে সাজ্জাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার জয়ন্তীপুর গ্রামে। সেখানে বাদ জোহর জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিউল আহসান বলেন, সাজ্জাদের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা। স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থী সন্তানের মত। সবার অজান্তে সাজ্জাদ সহ কয়েকজন এভাবে অনুশীলন করতে গিয়ে অনাকাংখিত এই ঘটনাটি ঘটে। এই দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি সার্বক্ষনিক সাজ্জাদ ও তার পরিবারের পাশে ছিলেন। তার অনাকাংখিত ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। শোক প্রকাশ করেছেন সেনানিবাসের কমান্ডার সহ উর্ধতন সেনাকর্মকর্তারা। বুধবার বেলা ১২ টার দিকে স্কুল চত্বরে অনুষ্ঠিত সাজ্জাদের প্রথম জানাজা নামাজেও তারা শরীক হন।
সাজ্জাদের বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, তার ছেলের মৃত্যুর জন্য তিনি কাউকে দায়ী করেননি। কপালের যা লেখা ছিল ,তাই হয়েছে। ছেলের লাশ ভারি হলেও মৃত্যুটা মেনে নিয়েছি। তিনি তার সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম পিপিএম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এঘটনায় শির্ক্ষাথী সাজ্জাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অভিযোগ করা হয়নি। কোন অভিযোগ নেই বলে লিখিত দিয়েছেন সাজ্জাদের বাবা । রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত শিক্ষার্থীর ময়না তদন্ত হয়েছে। দুপুরে নিহতের গ্রাম জয়ন্তীপুরে জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *