বড়াইগ্রামে নকল বীজে ১৬ বিঘা জমির ধানের সর্বনাশ!

প্রতিনিধি, বড়াইগ্রাম॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের ৫ কৃষক তাদের ১৬ বিঘা জমিতে ধানের বীজ লাগালেও কোন ফলন পায়নি। তেজ নামে হাইব্রীড ব্রান্ডের ধানের বীজ লাগানোর পর কৃষক সেই ধান ঘরে আনতে পারেনি। ধানের শীষে কোন চাল নেই অর্থাৎ শতভাগই চিটা। এদিকে গ্রামের অন্যান্য কৃষক অন্যান্য সকল জাতের ধান ঘরে তুললেও ওই ৫ কৃষক ও তার পরিবারদের মধ্যে কষ্ট ও বিষাদের ছায়া এসে ভর করেছে।
জানা যায়, মাঝগাঁওয়ের গুরুমশৈল গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান তার সাড়ে ৮ বিঘা, আলমগীর হোসেনের দুই বিঘা, জামালউদ্দিন প্রামাণিকের আড়াই বিঘা, জিয়াউল রহমানের দুই বিঘা ও আরিফুল ইসলামের এক বিঘা ১৬ কাঠা জমিতে অ্যারাইজ তেজ নামে হাইব্রীড জাতের ধানের বীজ কিনে এনে রোপণ করেন। এই ধানের বীজের প্যাকেটে উৎপাদক হিসেবে বায়ার বায়োসায়েন্স (প্রা.) লিমিটেড ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকার উত্তরার বায়ার ক্রপসায়েন্স লেখা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ওই কৃষকরা জানান, উপজেলার বনপাড়া বাজারের মজিদ বীজ ভান্ডার ও হানিফ বীজ ভান্ডার থেকে তারা গত জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ৩৩০ টাকা কেজি দরে বীজগুলি কিনেন। বীজ কেনার পর যথাযথভাবে বপন ও পরিচর্যা করা হয়। কিন্তু ধান পাকার মুহুর্তে দেখা যায় ওই ধানের গাছ মরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। শীষের একটিতেও চাল নাই, সবই চিটা।
এ ব্যাপারে কৃষকেরা ওই বীজ বিক্রেতা মজিদ সেখ ও হানিফ সেখকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় বায়ার কোম্পানী থেকে এ বীজ আমরা কিনে বিক্রি করেছি।
এদিকে অভিযুক্ত বায়ার ক্রপসায়েন্স এর স্থানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি রাকিব হোসেন জানান, ওই দুই বীজ ভান্ডারের কাছে এই কোম্পানী কোন বীজই বিক্রি করে নাই।
এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা গত ১০ মে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহমেদ এর কাছে লিখিত অভিযোগ করলে কৃষি কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনপূর্বক রিপোর্ট তিনদিনের মধ্যে দাখিল করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দায়িত্ব প্রদান করেন। কমিটি কয়েক দফায় পরিদর্শন করে যথাসময়ে রিপোর্ট দাখিল করার পর কৃষি কর্মকর্তার কাছে পুনরায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি এই বীজগুলো সরাসরি ধান থেকে বীজ করে থাকে তবে ফলন আসবে না। হাইব্রীডের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরীতে ক্রসিং করে বীজ উৎপাদন করলে তবেই ধানের ফলন হবে। এখন বায়ার ক্রপসায়েন্সই বলতে পারবে এর আসল কথা। এ ব্যাপারে তিনি বায়ার ক্রপসায়েন্স এর প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছেন। তারা এ বীজ সরবরাহ করেননি বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তাকে।
এদিকে আসল বীজের পরিবর্তে নকল বীজ বিক্রির দায়ে ওই দুই বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রমাণ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে এই ধান বপন থেকে কাটা পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। যদি এ ধানের ফলন হতো তাহলে তারা বিঘা প্রতি ১৭ হাজার টাকার ধান পেতো। এ ধান রোপন করতে অনেকেই চড়া সুদে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও এর কাছ থেকে লোন নিয়েছে। এ অবস্থায় তারা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ ও পরবর্তী পর্যায়ে কৃষি অফিসের কাছ থেকে বীজ, সার ও উপকরণ সহায়তা প্রার্থনা করেছেন।
মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল আলীম বলেন, সরেজমিনে ওই ধানের জমিতে আমি গিয়েছি এবং কৃষকদের অভিযোগ সত্য। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদান করে আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবার দাবি করারটা যৌক্তিক।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *