
বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে ৫টি ফলদ ও বনজ গাছ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের কনে সুকৃতি আদিত্য ও বর কুমিল্লার নাবিন আদনান দম্পতি। দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঝে এমন ব্যতিক্রমী দেনমোহরের কারণে আলোচিত হচ্ছেন তারা। বিয়ের সামাজিকতা শেষে বিয়ের দিনই কনের বাবার বাড়িতে ৫টি পরিবেশ বান্ধব গাছ রোপণ করেছেন বর কনে। গত শুক্রবার নাটোরের দিঘাপতিয়া এলাকায় উত্তরা গণভবনের পাশে কনের বাবার বাড়িতে কনে সুকৃতি আদিত্যের এমন বিয়ের আয়োজনে এলাকায় সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য।


স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধ আব্দুস সাত্তার, জানান, তিনি তার জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখেননি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে তার খুবই ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক এমন শুভকামনা জানান তিনি।
কনের নিকটাত্মীয় সাংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ মাসুম রেজা বলেন, দেনমোহরে সবসময় কনেদের বা কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা চেনতা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।
নাটোরের দিঘাপতিয়া এলাকার বাসিন্দা লিটন-সুস্মিতা দম্পতির একমাত্র কন্যা সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বর কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন আদনান একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন। বছর ছয়েক আগে তাদের পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন। পরে দু’পারিবারের সম্মতি নিয়েই সুকৃতি ও নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

বর নাবিন আদনান বলেন, দেনমোহরের বিষয়টা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশী জরুরী। এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। প্রতীকী ব্যাপার হিসাবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।
কনের বাবা জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুরের প্রধান লেখক ও সাবেক অংকন শিল্পী এম. আসলাম লিটন জানান, সুকৃতির এই সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বাবা হিসেবে গর্বিত। মেয়েকে তিনি সাধুবাদ জানান এবং মেয়ের এই সিদ্ধান্ত নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হবে বলে বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, ‘সুকৃতি সমাজকে একটা বার্তা দিতে চায় যে, মোহরানাটা মূল নয়। মূল হচ্ছে দুটি মানুষের বন্ধন। দুটি মানুষের হৃদয়-মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে।’



