পদ্মার চরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বেজা চেয়ারম্যান

নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে প্রস্তাবিত ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর স্থান পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল এর জন্য প্রস্তাবিত স্থান পদ্মার চর চরজাজিরা মৌজা পরিদর্শন করেন তিনি ।
এসময় নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীমা সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাকসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে বেজা চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ (গেটওয়ে) লালপুরে পদ্মার চরে প্রস্তাবিত নাটোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আশার আলো দেখবে। এখানে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী স্থান। এ সময় তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নাটোরের ডিসি শামীম আহমেদ বলেন, বেজা চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদনের পর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ২০১৫ সালের ২ মে স্থান নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক নুরুন্নবী মৃধা লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পক্ষে মত দেন। লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের চরজাজিরা, আরাজিবাকনাই, লালপুর, রসুলপুরসহ ৬ টি মৌজায় প্রায় ৩ হাজার ৪শ ১৮ একর জমি রয়েছে। এসসব জমির ওপর দিয়ে এক সময় প্রবাহিত ছিল পদ্মা নদীর মূল ¯্রােতধারা। ফলে ১৯৬৭ সালে আরএস রেকর্ড (১৯৭২ সালে বিতরণকৃত) প্রস্তুকালে তা কোন ব্যক্তির নামেই রেকর্ড হয়নি। এরমধ্যে পাঁচশো একর খাস জমি রয়েছে। বাঁকি ২৯শ’ একর জমি রয়েছে ব্যাক্তি মালিকানায় যা অধিগ্রহণ করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পদ্মার চর ও তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৩৪ শ একর জমির পুরোটাই প্রয়োজন হবে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য মূলত উপজেলার চরজাজিরা মৌজাকে লক্ষ্য করে এগুচ্ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। ওই মৌজাতেই তিন’শ একরের বেশী খাস জমি রয়েছে। এই খাস জমিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছিলিন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সদস্যরা।
এর পর থেকে লালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাপ্তরিক কার্যক্রমও শুরু হয়। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ আব্দুস সামাদ এবং ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এসএম শওকত আলী চরজাজিরা মৌজার প্রস্তাবিত নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৩১শে জানুয়ারী চার সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের এই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
তারা চরাঞ্চল ঘুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সড়ক, রেলওয়ে ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দরসহ সব ধরনের যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ সহজেই কাজে লাগানোর সুবিধা যাচাই করে সব সুযোগ সুবিধাই রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। এছাড়াও বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমূহের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের তালিকায় নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামও রয়েছিলো। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রাপ্তির বিষয়টি একধাপ এগিয়েও ছিলো। সে সময় ধারণা করা হচ্ছিলো ভূমি জরিপ কার্যক্রম শেষেই সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ শুরু হবে।
পরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, তিন থেকে চার বছরের মধ্যে নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্থনৈতিক জোনের কাজ শেষ হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও নাটোর জেলা প্রশাসনকে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন সমীক্ষার কাজও চলছিলো। খুব শীঘ্রই লালপুরের অর্থনৈতিক জোনের জমি অধিগ্রহণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো। পরবর্তীতে গেলো ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত লালপুরে পদ্মার চরাঞ্চল চর জাজিরা করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উপসচিব আবু হেনা মো. মোস্তাফা কামাল।
লালপুরের পদ্মার চরাঞ্চলে প্রস্তাবিত ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নির্মান হলে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার বেকারের কর্মসংস্থান সহ আত্মসামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *