নাটোর জেলা আ’লীগের পুনাঙ্গ কমিটি ঘোষনা হয়নি এক বছরেও

নাটোর অফিস ॥
নাটোর জেলা কমিটির ত্রিবার্ষিক কমিটির সম্মেলন হলেও এক বছরের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়নি। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে পুর্বের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষনা করার পর নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে সভাপতি এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা করা হয়। ওই সম্মেলন থেকে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ ঘোষনা করেন ৭১ সদস্যের জেলা কমিটির অন্যান্য পদের নাম সহ অনুমোদিত কমিটি পরে জানানো হবে। কিন্তু এক বছর অতিক্রান্ত হলেও পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়নি। ফলে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামীলীগ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করা হচ্ছে। তবে ওই কমিটি ঘোষনার পর থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের পদ হারানো নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের নেতৃত্বে একটি পক্ষকে আলাদাভাবে কর্মসুচী পালন করতে দেখা যায়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষিত না হওয়ায় অনেকেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পুর্বের কমিটিতে বিভিন্ন পদে থাকাদের অনেকেই অভিযোগ করছেন তাদের বাদ রেখে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ফলে তারা পদ বঞ্ছিত হওয়ার আশংকা করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কমিটির অন্যতম সদস্য ও লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদ্য লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক পদ হারানো ইছাহাক আলী বলেন,আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে রাজনীতি করি তাদের শেষ ঠিকানা আওয়ামীলীগ নামের একটি ঘর। একাধিক শ্রমিক ছাড়া দু’জন দিয়ে একটি ঘর বানানো যায়না বা শক্তিশালী হয়না। কাঠ ,বাঁশ সহ অনেক শ্রমিক লাগে। অথচ নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ চলছে দুজনকে দিয়ে। দলে যোগ্যদের ঠাই হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তেলবাজি করে ওই দুই নেতার মনগড়া অনেকেই হয়ত দলে ঠাঁই করে নিবেন ্। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে,তিনি যোগ্য কাউকে ছুড়ে ফেলে দিবেন না। আওয়ামীলীগে আছি,ছিলাম এবং আমৃত্যু থাকব।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন,যে পদ্ধতিতে কমিটি ডিকলার করা হয়েছে, অনেকেই আস্থা হারাচ্ছেন। দুজনের নাম ঘোষনার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুর্নাঙ্গ কমিটি এখনও ঘোষনা করা হয়নি। স্বপ্ন দেখার মত একদিন হয়ত পুর্নাঙ্গ কমিটির নাম জানা যাবে। যদি দয়া করে কেউ জানান তাহলে হয়ত জানা যাবে। এখন যে ভাবে চলছে তাতে মনে হচ্ছে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগ দু’জনার এজেন্সি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রয়েছে। তিনি ভাল দিক বিবেচনা করেই হয়ত কমিটি ঘোষনা করবেন।
নাটোর পৌর মেয়র ও সাবেক কমিটির সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেছেন,কিভাবে একবছর পার হয়ে গেলো অনুভব করতে পারিনি। কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। কবে নাগাদ কমিটি প্রকাশ্যে আসবে তিনি কিছুই জানেননা।
সাবেক কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম আক্ষেপের সুরে বলেন, কমিটি গঠনের ঘোষনার এক বছর পার হলেও প্রকৃত বিষয়টি জানতে পারছেন না। কমিটিতে কাকে নেয়া হবে বা নেয়া হবেনা কেউ জানাচ্ছেন না। জিজ্ঞাসা করেও সদুত্তর পাওয়া যায়না। জিজ্ঞাসা করলেই বলা হয় ২/১দিনের মধ্যে কমিটি আসছে। কিন্তু এক বছরেও পুর্নাঙ্গ তালিকা আসেনি। যেদিন অনুমোদিত কমিটি প্রকাশ্যে আসবে সেদিন সত্য প্রকাশিত হবে বলে মনে করছেন তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যদের রেখেই তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখানে হাইব্রিড অথবা জামায়াত-বিএনপির কেউ অনুপ্রবেশ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখো হচ্ছে। অচিরেই পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হবে বলে তিনি জানান। কমিটিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবারই সুযোগ রয়েছে। পদ পদবি ছাড়াই আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ক্ষোভ বা আক্রোশের কিছুই নেই।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, আওয়ামীলীগ থেকে কাউকে বাদ দেয়া যায়না। চাটুকারী করে কোন তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। যারা আওয়ামীলীগের সাথে রয়েছেন এবং সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে এমন যোগ্যদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ২/৩ দিনের মধ্যে পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয়। কোন ধরনের চাটুকারিতা করা হয়নি। সবার সাথে আলোচনা করেই কমিটির তালিকা করা হয়েছে। কেউ কেউ পদ হারানোর শংকায় মিথ্যাচার করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *