ফাটা ফুটবলই ওদের সেরা খেলোয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে

নাজমুল নাহিদ,গুরুদাসপুর
রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ফাটা ফুটবলের মধ্যে খরকুটো ঢুকিয়ে খেলাধুলা করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৭ জন শিশু কিশোর। হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নতুন কোন ফুটবল কেউ কিনতে পারেনি। বাধ্য হয়েই ফাঁটা ফুটবলের মধ্যে খরকুটো ঢুকিয়ে খেলতে হচ্ছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিলহরিবাড়ী গ্রামের ১৭ জন শিশু কিশোরকে।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমীনে গিয়ে দেখাযায়, ওই গ্রামের ছোট একটি মাঠে ১৭ জন শিশু কিশোর ফাঁটা ফুটবল নিয়ে খেলাধুলা করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুসাইন আলী, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মবিদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম,স্বাধীন মাহমুদসহ বিভিন্ন বয়সের আরো অন্তত ১৪ জন শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী মবিদুল ইসলাম জানায়,‘আমার বাবা কৃষক। আমরা দুই ভাই। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করি। পড়াশোনা শেষে গ্রামের মাঠে বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলা করি। কিন্তু আমাদের খেলাধুলা করার জন্য কোন খেলাধুলা সামগ্রী নেই। প্রায় দুই মাস আগে রাস্তার ধারে একটি ফাঁটা ফুটবল পেয়েছিলাম। ওই ফুটবলের মধ্যে খরকুটো ঢুকিয়ে আমরা খেলাধুলা করি। খেলা শেষে পায়ে ব্যথা হয়। কিন্তু কি করবো, আমাদের তো কেনার সামর্থ্য নেই। তাই খেলাধুলার জন্য এখন আমাদের ফাঁটা ফুটবলটাই ভরসা। অনেক কষ্ট করে আমার বাবা-মা আমাকে এবং আমার ভাইকে পড়াশোনা করাচ্ছে। তবে আমি যেদিন বড় হবো,চাকুরি করবো,তখন আমার গ্রামের সবাইকে খেলাধুলা সামগ্রী কিনে দিবো।
৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুসাইন আলী জানায়, ‘স্কুল থেকে ফিরে প্রতিদিন বিকেলে সহপাঠী ও ছোট ভাইদের নিয়ে খেলাধুলা করতে গ্রামের ছোট মাঠে যাই। আমাদের গ্রামটি অনেক অবহেলিত জনপদ। এখনও রাস্তা ঘাট কাঁচা। এমনকি স্কুলে যাওয়ার জন্য নদী পার হতে হয় বাঁসের সাকো দিয়ে। অনেক ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হয়। আর নতুন ফুটবল বা ক্রিকেট ব্যাড কিনে খেলাধুলা করা তো এখন আমাদের স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। বাবা অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে আমাকে আর ছোট বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছে। তাই বাবাকেও নতুন বল কিনে দেওয়ার কথা বলতে পারিনা। বাধ্য হয়েই ফাঁটা ফুটবল নিয়ে খেলাধুলা করছি। ভাগ্য ফেরার প্রতিক্ষায় আছি।’
শহিদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক দাবি করেন, ‘প্রতিদিন অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে উপার্জিত টাকা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। তারওপর আবার ছেলে মেয়েরে লেখাপড়া। এগুলো দিতেই হিমশিম খেতে হয়। নতুন ফুটবল কিনে দিবো কিভাবে। তবে ফাঁটা ফুটবল নিয়ে খেলা নিজের সন্তানদের খেলাধুলা দেখতে খারাপ লাগে।’
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা মুঠোফনে বলেন, এমন ঘটনা তার জানা ছিলোনা। তবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওই এলাকায় গিয়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে খেলাধুলা সামগ্রী পৌছে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *