৪০ বছর বয়সে স্বামী-স্ত্রী এসএসসি পরীক্ষা দিলেন

নাটোর অফিস॥
শিক্ষার কোন বয়স নেই, নেই কোন বাঁধা। এমন বাণী হাদিসেও রয়েছে ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বিদ্যার্জন কর’। ৪০ বছর বয়সে এসে এক সাথে এসএসসি পরীক্ষা দিলেন স্বামী-স্ত্রী। সারাদেশের ন্যায় নাটোরের গুরুদাসপুরেও বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। উপজেলা পৌর সদরের বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ওই স্বামী স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের খামারনাচঁকৈড় মহল্লার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ ফজলুর রহমান (৪০) ও তার স্ত্রী মোছাঃ মর্জিনা বেগম (৩০) বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। উপজেলার বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজের ভোকেশনাল শাখা’র ২০২২ সালের শিক্ষার্থী তারা স্বামী স্ত্রী। ফজলুর রহমান ওই মহল্লার মৃত আসাদ আলী মোল্লা’র ছেলে ও তার স্ত্রী একই এলাকার মৃত-মজিবর রহমানের মেয়ে।
পরীক্ষার্থী ফজলুর রহমান বলেন, আমার বয়স এখন ৪০ এর উপরে। আর আমার স্ত্রীর প্রায় ৩০ বছর। আমাদের সংসারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে আমরা দুইজন স্বামী স্ত্রী পরামর্শ করে বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজে ২০২০ সালে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই। নিয়মিত স্কুলে না যেতে পারলেও বাড়িতে দুইজন পড়াশোনা করতাম। করোনার কারণে প্রথমে পরীক্ষা না হলেও ২০২২ সালে এসে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্টিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিলো। আমরা দুইজন এক সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি এবং আমাদের পরীক্ষাও অনেক ভাল হয়েছে। আগামী শনিবার ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। সাধ্যমত চেষ্টা করবো উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার। এছাড়াও ৫ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে সাধারণ মানুষের সেবা করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দেখেছি যারা নিরক্ষর তাদের কষ্ট এবং তাদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত। আমি এসএসসি পাশ করার পর ডিপ্লোমা কোর্স করবো আমার স্ত্রীকেও করাবো। একসময় আমার ছেলে মেয়ে বড় হয়ে তারা গর্ববোধ করবে তাদের বাবা মাও শিক্ষিত। তাই আসুন আমাদের মত বয়সের যারা আছেন তারা নতুন করে আবার পড়াশোনা শুরু করেন।
ফজলুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, আমি ২০০৯ সালে পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম। আমার স্বামীর আগ্রহে দুইজন পরামর্শ করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। দুই জন এক সাথে বাড়িতে পড়াশোনা করে আবার এক সাথে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা আরো অনেক পড়াশোনা করতে চাই।
ফজলুর রহমানের মা ফুলোয়ারা বেগম জানান, আমার বাড়িতে ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে যখন নাতি-নাতনিও পড়তে বসে তখন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে । আমি তাদের জন্য সব সময় দোয়া করি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই বয়সে এসেও তাদের পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ আছে তা প্রশংসনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *