নাটোরে জ্বালানি সংকট ও লোড শেডিং-এ ভোগান্তি

নাটোর অফিস ॥
সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশজুড়ে সূচি ধরে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা থাকলেও নাটোরের গ্রামাঞ্চল গুলোতে ৩ থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত লোড শেডিং করা হচ্ছে। শহর এলাকায় বিদ্যুতের লোড শেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও গ্রাম পর্যায়ে অবস্থা ভয়াবহ। নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ ও নেসকো লিমিটেড কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদিকে নাটোর জেলায় আমন ধান চাষ শুরু হওয়ায় অনাবৃষ্টির কারনে সেচ সংকট হতে পারে বলে শংকা চাষীদের। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দাবি আমন ধান বৃষ্টি নির্ভর ফসল হওয়ায় পানি সেচের প্রয়োজন পড়বেনা। এছাড়া নিচু জমিতে এসব ধান আবাদ করা হয়। এতে করে বিদ্যুৎ বা জ্বালানী তেলের ওপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা কম।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত জেলা প্রশিক্ষন অফিসার ডা. মোঃ ইয়াছিন আলী বলেন, জেলায় বর্তমানে বৃষ্টি নির্ভর ফসল আমন ধান চাষ শুরু হয়েছে। নিচু এলাকা হওয়ায় বাড়তি পানি সেচের প্রয়োজন হচ্ছেনা। এতে করে সেচ যন্ত্র চালানোর জন্য জ্বালানী তেল বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছেনা।
এদিকে বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কবলের শিকার হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন নাটোরের বিসিক শিল্প নগরির শিল্প মালিকরা। হঠাৎ হঠাৎ লোড শেডিয়ের কারনে বিসিক নগরীর শিল্প কারখানার নাটোর জুট মিল সহ বেশ কয়েকটি কারখানার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছ্।ে কারখানা মালিকদের অভিযোগ,পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর আওতাধীন এই বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় ঘোষনা ছাড়া লোড শেডিং করায় তারা উৎপাদন ব্যহত হওয়া সহ যন্ত্রাংশ ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

নাটোর জুট মিলের পরিচালক প্রদীপ কুমার আগওয়ালা জানান, বিসিক নগরীতে প্রায় ২৫টি ছোট বড় কারখানা রয়েছে। এই নগরীতে এখন অঘোষিতভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা লোড শেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুত সংকটের কারনে এমনিতেই উৎপাদন ব্যহত হয়। উপরুন্তু অঘোষিত লোডশেডিং করার কারলে কারখানার বেশ কিছু মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে।
বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক দিলরুবা দিপ্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ক্ষতিগ্রস্থ মালিকরা বিষয়টি নাটোর পল্লীবিদ্যুত সমিতি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে লোডশেডিংয়ে সময় নির্ধারন করে আগাম ঘোষনা দেওয়ার দাবি করেছেন। এই বিদ্যুত সংকট নিয়ে কারখানা মালিকরা বিসিক কর্তৃপক্ষের সাথে আজ বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন।

পল্লীবিদ্যুত সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী এমদাদুল হক বিসিক শিল্প নগরীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুত সরবরাহের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে অন্য কোন কারন বশত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও বিষয়টি বিসিক নগরী কর্তৃপক্ষ বা কারখানা মালিকদের কেউই পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ কে অবহিত করেনি। নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর গ্রাহকদের জন্য ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী কাটাখালী এলাকার জন্য ১৩ মেগাওয়াট এবং অবশিষ্ট এলাকার জন্য ৯৭ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লোড শেডিং করতে হচ্ছে। নাটোরে আমন চাষ শুরু হলেও নিচু এলাকা হওয়ায় সেচ যন্ত্রের প্রয়োজন হচ্ছেনা। তবে রাজশাহীর বাঘমারা এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকুপ দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে।
নেসকো প্রাইভেট লিমিডেট নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোঃএনামূল আজীম ইমান জানান, নাটোর শহর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৯ থেকে ১০ মেগাওয়াট। ফলে এলাকাভিত্তিক এবং পর্যায়ক্রমে ১ ঘন্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। যা গ্রাহকদের সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
অপরদিকে ইজিবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিদ্যুতের ওপর চাপ রয়েই গেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র দাবি করছে। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিদ্যুত বিভাগের নির্দেশ ও পরামর্শে ইজিবাইকে সুচি ধরেই বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। আগে দিনভর ইজিবাইকে বিদ্যুতের চার্জ দেওয়া হতো এখন রাত্রি ১০ টার পর থেকে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। বাস-ট্রাক সহ জ্বালানী তেলের ব্যবহারেও তেমন একটি চাপ নেই। নাটোরের ফিলিং স্টেশনগুলোতে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনা গ্রহনের আগের মত করে চলছে। নাটোরের ফিলিং স্টেশনগুলোতেও তেমন একটা চাপ নেই। পরিবহন চালকদের কোন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছেনা। এমনকি ফিলিং স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধেও কোন অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। যানবাহন মালিক ও চালকরা বলেন,জ্বালানী সংকট থাকলেও নাটোরের কোন ফিলিং স্টেশনে তাদের হয়রানি বা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছেনা।
নাটোর বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক ও রাজকীয় পরিবহনের মালিক মজিবর রহমান জানান, নাটোরের ফিলিং স্টেশন মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ফিলিং স্টেশন থেকে তেল সংগ্রহেও কোন ভোগান্তি নেই।
নাটোর ফ্রেন্ডস পেট্রোলিয়াম ও বনলতা ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবিব বাবু বলেন,সংকটের কারনে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাওয়া গেলেও নাটোরের ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে যানবাহন চালক বা ক্রেতাদের কোন ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছেনা। প্রত্যেককে তাদের চাহিদা অনুযায়ী দিতে না পারলেও তারা অখুশী হচ্ছেননা। সরবরাহ পদ্ধতির কারনে কাউকে ফিরে যেতে হচ্ছেনা। তবে কারো অতিরিক্ত চাহিদা পুরন করা হচ্ছেনা। নাটোরের প্রতিটি ফিলিং স্টেশনেই একই পদ্ধতিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত অটোগ্যাস সরবরাহ থাকায় কোন সংকট নেই।
অপরদিকে সংশ্লিষ্টদের দাবি বিদ্যুত চালিত ইজিবাইকে বিদ্যুত ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম পালন করা হচ্ছে। প্রশাসন ও বিদ্যুত বিভাগের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ইজিবাইকে চার্জ বা বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে।
শহরের কানাইখালী এলাকার ইজিবাইকে বিদ্যুত সরবরাহকারী ই্উসুফ আলী বলেন, সরকারের ঘোষনার আগে রাত ৮ টা থেকে ইজিবাইকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হতো। এখন রাত ১১ টার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ইজিবাইকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়মিত তদারকির জন্য বিদ্যুত বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মোবাইল টিম কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোডের অতিরিক্ত বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়টিও দেখতে বলা হয়েছে বিদ্যুত বিভাগকে। যারা নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা দেশে যে নিয়মে হচ্ছে নাটোরেও সেভাবেই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *