নাটোরে এবার কোরবানীর হাট কাঁপাতে আসছে বস,ভোলা ও ধলা বাহাদুর!

নাটোর অফিস ॥
আসন্ন কোরবাণীর হাট কাঁপাবে নাটোরের তিন গরু বস,ভোলা ও ধলা বাহাদুর। বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সদর উপজেলার প্রন্তিক পর্যায়ের তিন খামারি গত কয়েক বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু লালন পালন করছেন। খামারিদের প্রত্যাশা গরু তিনটির ন্যায্য মুল্য মিলবে । ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরু তিনটির একটির নাম বস। দেখতে কুচকুচে কালো রংয়ের। ধবধবে সাদা রংয়ের গরুর নাম ভোলা এবং সাদা-কালো বর্ণের অপর গরুর নাম ধলা বাহাদুর। এদের মধ্যে বসের ওজন ৩৬ মন এবং ভোলা ও ধলা বাহাদুরের ওজন ৩০ মন করে। নাটোরের বড়াইগ্রাম,গুরুদাসপুর ও সদর উপজেলায় লালন পালন করে বড় করে তোলা হয়েছে এই তিনটি গরু। এসব গরুর মধ্যে বস ও ভোলার মেজাজ বেজায় গরম। বস ও ভোলাকে সামলো বেজায় মুশকিল। কাউকে দেখলেই তেড়ে যায় তাদের দিকে। অপরদিকে উল্টো আচরনের ধলা বাহাদুরের। বড়াইগ্রামের ভান্ডারদহ গ্রামের শফিকুল ইসলাম তিন বছর ধরে লালন-পালন করেছেন বসকে। কুচকুচে কালো রং হওয়ায় আদর করে তার নাম রেখেছেন বস।

খামারি শফিকুল জানান, বসকে তিনি নিজের সন্তানের মত করে লালন পালন করেছেন। দেশীয় খাবার ব্যতিত রাসায়নিক কোন খাবার খাওয়াননি শফিকুল। এবারের কোরবানী ঈদে বসকে বিক্রির জন্য হাটে তুলবেন। প্রতিদিন খেসারি,ছোলা ও গম খাইয়েছেন। ইতিমধ্যে অনলাইনে প্লাটফরমে বসের ছবি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এখনও দাম হাঁকানো হয়নি বসের । ইতিমধ্যে অনেকেই বসকে দেখতে শফিকুলের খামারে ভির করছেন।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর ঠাকুরপাড়া গ্রামের হাফিজুল রহমান সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু পালন শুরু করেন। গত চার বছর ধরে ভোলাকে লালন পালন করে আসছেন।

হাফিজুল রহমান বলেন, গরু পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চার বছর আগে ভোলাকে হাট থেকে কিনে লালন-পালন শুরু করেন। শখের বসে তার নাম রেখেছেন ভোলা। প্রতিদিন ভোলাকে দেখতে বাড়িতে মানুষ ভির করে। ভোলা দেখতে হাতির মতো। লোকজনকে দেখলেই গর্জন করে তেড়ে আসে। ভয়ে তার কাছে যেতে চায় না কেউ। আসছে কোরবানীর ঈদে ভোলাকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করার প্রত্যাশা নিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা সহ যতœ করছেন। ফিড সহ কোন ধরনের রাসায়নিক খাবার খাওয়াননি। দেশীয় খখাবার খাইয়েই বড় ও মোটা তাজা করে তুলেছেন। গত ঈদে ঢাকার একটি কোরবাণীর হাটে ভোলাকে তুলেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় ভোলাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। তিনি আশা করছেন এ বছর ১২ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি হবে।
এদিকে আকারে বসের কাছাকাছি এবং ভোলার সমপরিমান হলেও এই দুই গরুর চেয়ে মেজাজ একেবারেই উল্টো ধলা বাহাদুরের। শান্ত স্বভাবের গরুটি লালন পালন করছেন নাটোর সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের নাজমুল হক। বিশাল আকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়ের রং সাদা-কালো বর্ণের হওয়ায় আদর করে তার নাম রাখা হয়েছে ধলা বাহাদুর। সাড়ে তিন বছর আগে নাজমুল হকের নিজের খামারে জন্ম নেওয়া ষাঁড়টিকে আসছে কোরবানীর ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নাজমুল পেশায় একজন কৃষক। নিজ উদ্যেগে সন্তানের মতো সাড়ে তিন বছর ধরে পরম যতেœ লালন পালন করছেন ধলা বাহাদুরকে। সঠিক পরিচর্যা আর নিজ জমিতে চাষ করা নেপিয়ার ঘাস, খড়, খইল, ভুষি খাওয়ানো হয় ধলা বাহাদুরকে। কোরবানির জন্য প্রস্তুত ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। আশপাশের লোকজন ষাঁড়টিতে দেখতে ভির করছেন।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন ও বায়োজিদ হোসেন জানান,নাজমুলের খামারের বিশাল আকারের এই ষাঁড়টি দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করে তোলা হয়েছে। ফিড সহ কোন ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়নি। দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড়টিকে বড় করে তোলা হচ্ছে। এই গরুর মাংস স্বাস্থ্য সম্মত। প্রতিদিন তারা একবার করে হলেও এই ষাঁড় দেখতে নাজমুলের বাড়ির খামারে যান।
নাজমুল হক বলেন, নিজ খামারে সাড়ে তিন বছর আগে জন্ম নেয় ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির আদর করে নাম রেখেছেন ধলা বাহাদুর । সন্তানের মতো করে পরম যতেœ লালন পালন করেছেন। নিজে না থাকলে ধলা বাহাদুরকে পরিচর্যা সহ দেখভাল করেন তার স্ত্রী মনিরা খাতুর ও ১০ বছর বয়সী মেয়ে নিঝুম। তারা ধলা বাহাদুরকে আকর্ষণীয় করতে মেহেদী পড়িয়ে সাজিয়ে রাখে। ধলা-বাহাদুরকে দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ভির করছে। এখন পর্যন্ত দাম করেননি কেউ। ধলা বাহাদুরকে হাটে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ার অশংকা তার। তাই তিনি নিজের খামারে রেখেই বিক্রি করতে চান। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সহায়তায় অনলাইনে ষাঁড়টির প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তার এই ০১৭৪৭৮৭০৯৮০ মোবাইল ফোন নম্বর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যাশিত দাম পেলেই বিক্রি করে দেবেন ধলা বাহাদুরকে।
নাজমুল আরো বলেন, ষাঁড়টিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে কোন ধরনের রাসায়নিক খাবার খাওয়ানো হয়নি। ধলা বাহাদুরের খাবার বাবদ গড়ে প্রতিদিন সাতশত টাকা খরচ হয়েছে।
এবার সবার চোখ এই তিনটি গরুর দিকে। আসন্ন কোরবাণীর ঈদের বাজারে বস,ভোলা ও ধলা বাহাদুরের মধ্যে কে জিতবে বা সেরা হবে।
নাটোর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, আসন্ন কোরবানী ঈদকে ঘিরে নাটোর জেলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে। প্রাকৃতিক উপায়ে নাজমুল একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন। এতো বড় গরু নাটোরে বিক্রি করতে অসুবিধা থাকায় অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকাসহ জেলার বাইরে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *