নাটোরের একটি ইতিহাস রাতারাতি উধাও!

নাটোর অফিস ॥
রাতরাতি উধাও হয়ে গেছে নাটোর শহরের একটি ইতিহাস। নাটোর শহরের বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত লালবাজার স্বর্নপট্টি (পিলখানা) এলাকায় অবস্থিত বাহাদুরশাহ্ পার্ক লেখা গেইটটি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উধাও হয়ে গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে ১৯৩০ সালে নির্মিত বাহাদুর শাহ্-এর স্মৃতি বিজরিত পার্কের নাম লেখা ইটের তৈরি গেইটটি তার জায়গায় দেখা যাচ্ছেনা। এতে করে স্থনীয় প্রবীন ব্যক্তি ও বিশিস্টজনেরা মনে করছেন শহরের একটি ইতিহাসকে রাতারাতি গায়েব করা হয়েছে। এই গেইট গায়েব করার সাথে সাথে রাজা-মহারাজা এবং অর্ধবঙ্গেশ্বরী মহা রানী ভবানী অধ্যুষিত নাটোর শহরের একটি ইতিহাস বাহাদুর শাহ্ পার্কের পিঠে শেষ পেরেক পোতা হলো। নতুন প্রজম্মের কাছে প্রবীনদের কাছে এই বাহাদুর শাহ পার্কটি শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে। আর প্রজম্মরা জানতেই পারবেনা বাহাদুর শাহ পার্কের কথা। বিনোদনের জন্য তৈরি পার্কটি এখন স্বর্ন মার্কেট।

নাটোর শহরের পিলখানায় এলাকায় (লালবাজার স্বর্ন পট্টি) ১৯৩০ সালে বিনোদনের জন্য বাহাদুর শাহ্ পার্ক নির্মান করা হয়। এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, পিলখানা এলাকায় বাহাদুর শাহ নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর কোন সন্তান ছিল না। তিনি তার সম্পত্তি তৎকালীন সময়ে নাটোর টাউন কমিটির নামে (বর্তমানের পৌরসভা) শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য ওয়াকফ করে দেন। পরে টাউন কমিটি পার্ক নির্মাণ করেন এবং জমিদাতার নামেই এই পার্কটি নামকরণ করা হয়। কিন্তু কালের বির্বতনে পার্কটির পরিধি কমতে শুরু করে। পার্কের পাশে গড়ে তোলা হয় স্বর্ণ শিল্পের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেই সাথে মোটর বাইক গ্যারেজ,ছোট ছোট দোকান এবং ধুমপায়ী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল।শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি বিনোদনের জায়গা থাকা সত্বেও স্বার্থান্বেষীদের ভয়াল থাবায় হারিয়ে যেতে থাকে বাহাদুর শাহ পার্কটি। পরবর্তীতে ২০০২ সালে তৎকালীন পৌর পরিষদ রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পার্কে মাকেট নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ওই মার্কেটে এখন গড়ে তোলা হয়েছে স্বর্ন শিল্পের কর্মযজ্ঞ। এতে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও থেমে থাকেনি মার্কেট নির্মান কাজ। বাহাদুর শাহ পার্কের ভিতরে মার্কেটের তিন তলা ভবন নির্মিত হলেও বাহাদুর শাহ্ পার্ক লেখা গেইটটি তার জায়গাতেই ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে পার্কের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের কোন এক সময়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক লেখা ইটের তৈরি গেইটটি সরিয়ে ফেললে পার্কের শেষ চিহ্ন হারিয়ে যায় ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক স্বর্ন ব্যবসায়ী বলেন, তৎকালীন সময়ে বাহাদুর শাহ পার্কটি বেদখল হয়ে যাচ্ছিল। সে কারণে দখলমুক্ত ও পৌরসভার আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পার্কের এক অংশে নির্মাণ করা হয়েছিল মার্কেট। তাতে করে পার্কের অস্তিত্ব¡ টিকে ছিল এবং বেদখল হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পেয়েছে। তবে বর্তমানে পার্কের গোটা অংশ জুড়ে মার্কেট নিমার্ন করা হয়েছে।
এদিকে বাহাদুরশাহ্ পার্ক লেখা গেইটটি রাতারাতি গায়েব হয়ে গেলে সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এঘটনায় ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে অনেকেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
পৌর মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, ২০০২ সালে বেদখল হওয়ার হাত থেকে রক্ষাসহ পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৎকালীন পৌর পরিষদ মার্কেটটি নির্মান কাজ শুরু করে। পুরাতন প্রাচীর ভেঙ্গে নতুন গেইট স্থাপনের জন্য বাহাদুর শাহ লেখাটি ভাঙ্গা পরেছে। বাহাদুর শাহ এর নাম কখনই মুছে ফেলা হবেনা। “বাহাদুর শাহ্ লেখা নামেই আধুনিক ও ডিজিটাল সাইন বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। যাতে “বাহাদুর শাহ্ মার্কেট “লেখা থাকবে। সাইনবোর্ডটি হবে নয়নাভিরাম।

 

 

 

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *