লালপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নাটোর অফিস ॥
আজ ১৩ ডিসেম্বর নাটোরের লালপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১’ সালের এই দিনে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর আক্রমনের কাছে পাকিস্তানী হানাদাররা পরাজিত হলে লালপুর হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয় এই লালপুর উপজেলার দুর্গম ময়না গ্রামে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীর ২৫নং রেজিমেন্ট নগরবাড়ি হয়ে নাটোরে আসার পথে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এই দলের সদস্যরা পথ ভুলে লালপুরের ময়না গ্রামে ঠুকে পড়ে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন মুহুকুমা শহর নাটোর সহ আশে পাশের কয়েকশ মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা ওই গ্রাম ঘিরে ফেলে। দু’দিন ধরে চলে যুদ্ধ যা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং তাদের রেজিমেন্ট ধংস হয়। যুদ্ধে ৯ পাক সেনা নিহত হয়। তবে এদিন প্রায় ৪২ জন বাঙ্গালী শহীদ হন। পরবর্তীতে ৫ মে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা লালপুরের গোপালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেডের এলাকা ঘেরাও করে মিলের প্রশাসক সহ অন্তত ৫০ শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে ধরে চিনিকলের গোপাল পুকুর পাড়ে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।স্বাধীনতার পর এই পুকুরের নাম শহীদ সাগর এবং গোপালপুর রেলওয়ে স্টেশনের নামকরণ আজিমনগর করা হয়। পাকসেনারা ময়না গ্রামের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং আক্রোশে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে হত্যা যজ্ঞ চালায়। পাকিস্তানী সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। পরবর্তীতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা লালপুর থেকে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় মহেষপুর গ্রামে অন্ত ৩০ জনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ফলে ১৩ ডিসেম্বর থেকে লালপুর পাকহানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এবারও লালপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিকদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *